প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
সলাত পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। যেকোন অবস্থায় এটি ফারয। অসুস্থ হলেও এটি আদায় করতে হবে। এর কোন কাযা বা কাফফারা নেই। এর কাফফারা হলো যখন স্মরণ হবে তখনই পড়ে নিবে। বর্তমানে সলাত আদায়কারী যেমন কমে গেছে। তেমনি সলাত সঠিক ভাবে আদায় কারীও কমে গেছে। যেমন রুকু সাজদাহতে এখন আর পিঠ সোজা রাখা হচ্ছে না। অথছ হাদীসে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ,দারেমী, মিশকাত হা/৮১৮)
আত-তাহরীকে শ্রদ্ধেয় মুজাফফর বিন মুহসীন জাল হাদীসের কবলে সলাত নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশ করছেন। কিন্ত আমি লক্ষ্য করেছি যে, এমন কিছু নিয়ম আমাদের সমাজে মাজহাবের দোহাই দিয়ে রয়েছে যেগুলো কোন যইফ হাদীস কেন জাল হাদীসেও নেই। শুধুমাত্র অজ্ঞতা, অন্য মতের বিরোধিতা করেই এগুলো না করাই সুন্নাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এগুলোর বিপরীতে সহীহ হাদীস আছে যেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস অমান্য করা কুফরির শামিল। (হাদীস চর্চ্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ড: মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৬৭). যেমন সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানো। এ দুটি বিষয় নিয়েই আমি আজ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
সলাত এমন একটি ইবাদাত যা দিনে পাঁচবার আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে, একে অন্যের কাছাকাছি আনে। খোঁজখবর জানা যায়। যেমন আমি আগে যে মাসজিদে সলাত আদায় করতাম, একজন নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম তিনদিন হলো তবুও তাঁকে পেলাম না মনটা খচখচ করছিলো। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি বাড়ী বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। তেমনি যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এবং আমি মেস ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলাম পরে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি এতদিন বাড়িতে ছিলাম নাকি? কেমন দিনকাল গেলো? সত্যি বলতে কি তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিলো। রাজশাহীতে এসে স্থানীয়দের মধ্যে যাদের সাথে আমার হৃদতা বা আন্তরিকত গড়ে উঠেছে তাদের সবার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়েছিলো মাসজিদে।
আমি মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র না। যখন ইসলাম শিক্ষা পড়তাম তখন একটি প্রশ্ন বারবারই আসতো সেটা হলো, নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা কর। এর উত্তর যা নোটে ও গাইডে পাওয়া যেত তাতে পয়েন্ট আকারে সামাজিক গুরুত্ব লেখা থাকতো । তাতে উল্লেখ থাকতো, সলাত সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে থাকে। সলাতের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এখানে কোন ধনী গরীবের ব্যবধান থাকে না। কিন্ত সলাত আদায় করতে গিয়ে দেখেছি যে, ধনী গরীব এর ব্যবধান না থাকলেও মতের ব্যবধান আছেই। সলাত আদায় করতে গিয়ে কাতার সোজা করা হয় না। পায়ের সাথে পা মিলালেই পা সটান করে সরিয়ে নেয়। এটা কিসের ইঙ্গিত! এটা কি হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার ইঙ্গিত দেয় না। এখানে ব্যবধান কি? না ধর্মের না ঐশ্বর্যতার না অন্য কিছুর। কিছুই না এখানে বিরোধিতা অন্য মতকে বিরোধিতার।
সহীহ হাদীসে কাতার সোজা করার ও পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা বলা আছে। কিন্ত তা আমল করা হচ্ছে না। এটার বিরোধিতা করা হচ্ছে। প্রধানত হানাফী মাযহাবের মাসজিদগুলোতে এটা বেশী করা হচ্ছে। এটার প্রভাব এমন পড়েছে যে আহলে হাদীসের মাসজিদগুলোতে এমনকি আহলে হাদীসের সন্তানগুলোও আজ পায়ের সাথে পা মিলানো ভুলতে বসেছে। এটা না করানোটাই তাদের কাছে সুন্নাহ হয়েগেছে নাউযুবিল্লাহ।
আমি হানাফী মাযহাবের মুখতাসারুল কুদরী, হিদায়া পড়েছি কোথাও পায়নি যে, সলাতের সময় পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। তবে এসব কিতাবে সলাত কাতার সোজা করার গুরুত্ব উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাতার সোজা কিভাবে হবে তা বলা নেই। এর অর্থ হলো যে, সলাতে কাতার সোজা তখনই হবে যখন পায়ের সাথে মিলানো হবে। আল্লাহর নাবী (সা) বলেছেন, সলাতে কাতার সোজা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে করতে হবে বলেন নি, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কিভাবে কাতার সোজা করতে হবে তাও বলেছেন, তিনি বলেছেন কাঁধে কাঁধ পায়ের সাথে পা মিলানো’র কথা বলেছেন। অথচ এ হাদীসের উপর আমল নেই। মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পড়ানো মিশকাতের কাতার সোজা করার অধ্যায়-এ হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত ব্যাখ্যা করার সময় একবারও পায়ের সাথে পা মিলানোর ব্যাখ্যা করেননি। একটা হাদীসও নেই তা জাল,যইফ হোক যে পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। এটা কিভাবে আসলো ? এটা এসেছে আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করে। আহলে হাদীসরা পায়ের সাথে পা মিলায়। অতএব আমরা তো আহলে হাদীস না, আমরা হানাফী অতএব আমাদের জন্য পা ফাঁক করে দাড়ানো ও পা না মিলানোই সুন্নাত। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (সা) কি আমাদের আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে বলেছেন নাকি ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপনার হিন্দু ধর্মের জাতপাতের ব্যবধানকে নিয়ে আসছেন। যেখানে এক জাতের ব্যক্তির অন্য জাতকে স্পর্শ করাও পাপ। একটু ভাববেন কি, আমরা যারা সলাতে পা ফাঁক করে দাড়াই এবং কেউ পা মিলালে সটান করে পা টান দিই। তাদের এই আচরণের সাথে হিন্দুদের আচরণের কি মিল নেই ? নাউযুবিল্লাহ আমরা সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ করছি। ধিক্ ধিক্।
পায়ের সাথে পা না মিলানোর যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে হাদীসে আছে দুপায়ের ব্যবধানে শুধুমাত্র চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখতে হবে। আমি জানতে চাই কোন হাদীসে আছে? এমন কথা যে দু পায়ের ব্যবধান চার আঙ্গুল রাখতে হবে। প্রকৃত পক্ষে কাতারে দাড়াতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। সুনানে আবু দাউদে উল্লেখ রয়েছে, কেউ সলাত জুতা জোড়া উভয় পায়ের মাঝখানে রাখার কথা রয়েছে। একজোড়া জুতা রাখলে কি চার আঙ্গুল ব্যবধান হবে কি? এই চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখার কথা বেশী বলে থাকে ইলিয়াসী তাবলীগীরা। এরাই আবার মজলিসে বসে বয়ান করলে আর হুয়াহু জিকর করলে বলে ফাকা হয়ে বসবেন না। মাঝে শয়তান প্রবেশ করবে। অথচ এই শয়তান প্রবেশ করার কথা তাদের সলাতের ক্ষেত্রে মনে থাকে না। অথচ হাদীসটি মজলিসের ক্ষেত্রে যতটা না উল্লেখ হয়েছে সলাতের ক্ষেত্রে অনেক বার উল্লেখিত হয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে আমি এ সামান্য (?) ব্যাপার নিয়ে এত কথা লিখছি কেন। ব্যাপারটি সামান্য যে নয় নিম্নোক্ত হাদীসগুলো পড়লেই জানা যাবে। এখন আমি কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর হাদীসগুলো উল্লেখ করছি।
মিশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ থেকেই হাদীসগুলোর উদ্ধৃতি দিচ্ছি। মিশকাতুল মাসাবীহ’র “কাতার সোজা করা” নামক অধ্যায়ে যেসব হাদীস উল্লেখিত রয়েছে তা হলো-
হযরত নোমান ইবনে বশীর(রা:) হইতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:)আমাদের সারিসমূহ সোজা করতেন এমনভাবে যে উহার সহিত তিনি তীর সোজা করতেছেন।তিনি এরূপ করতেন যতক্ষণ না তিনি বুঝতে পারতেন যে আমরা বিষয়টি তাহার নিকট হতে পুরাপুরি বুঝতে পেরেছি।একদা তিনি ঘর হতে বাহির এয় আসলেন এবং নামাযে দাড়ালেন, তাকবীরে তাহরীমা বলিলেন, এমন সময় দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি সারি হতে সামনে সিনা বাড়িয়ে দাড়িয়েছে।তখন রাসূল (ষঅ:) বলিলেন, আল্লাহর বান্দাগণ!হয় তোমার তোমাদের সারি সোজা করে দাড়াবে নতুবা আল্লাহ তোমার মুখমন্ডলসমূহে অর্থ্যাত অন্তরসমূহে পার্থক্য করে দিবেন।” [মুসলিম (মিশকাত ২য় খন্ড-হাদীস নং-১০১৭,মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পাঠ্য,মিশকাত শরীফ ৩য় খন্ড-এমদাদিয়া লাইব্রেরী,হাদীস নং-১০১৭]
নুমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃস্টি করে দিবেন।” [বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হা/৬৬২, প্রথম খন্ড]
দেখুন কতবড় হাদীস কি বড় কথা । মাঝে মাঝে এমন হাদীস এসে যায় যা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই।
আরো বর্ণিত আছে, হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “একদিন নামাযের ইকামত বলা হলো তখন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরষ্পর মিলিত হয়ে দাড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পিছনের দিকেও দেখতে পাই।” [বুখারী (মিশকাত হা/১০১৮)]
বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ছফসমূহকেপূর্ণ কর।নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখতে পাই।” [মিশকাত হা/১০১৮ শেষাংশ]
হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “তোমরা নামাযের সারিসমূহকে সোজা করিবে।কেননা সারি সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীভুত।–বুখারী ও মুসলিম।আর মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, ছফ সোজা করা বা কাতার সোজা করা নামায পূর্ণ করারই অন্যতম কাজ।” [মিশকাত হা/১০১৯]
হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা)নামাযে (দাড়ালে) আমাদের বাহুমূলসমূহে হাত স্পর্শ করে পরষ্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন তোমরা সোজা হয়ে দাড়াও, বিভিন্নরুপে দাড়িও না, তা হলে তোমাদের অন্তরসমূহও প্রভেদ হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা প্রবীণ ও বিজ্ঞ তারাই যেন আমার কাছাকাছি দাড়ায়।অত:পর যাহারা বয়স ও বিজ্ঞতায় তাদের কাছাকাছি তারা দাড়ায় অনুরুপভাবে বয়স ও জ্ঞান কম অনুসারে তার পরবর্তীগণ দাড়ায়।” [আবু মাসউদ (দু:খ করে) বলেন, আজ তোমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত বিভিন্নমুখী। (মুসলিম,মিশকাত হা/১০১৯)।]
আমি কেন কথাগুলোর গুরুত্ব দিয়েছি তাদের জওয়াব এই হাদীসটি।
হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। “তিনি বলেন, হযরত তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পর মিশে দাড়াও।সারিগুলোকে কাছাকাছি রাখ এবং তোমাদের ঘাড়গুলিকে সমভাবে সোজা রাখ। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম, নিশ্চয় আমি কালো ভেড়ার বাচ্চার মত শয়তানকে দেখি,যে সারির ফাকে প্রবেশ করে।” [আবু দাউদ।(মিশকাত হা/১০২৫)।]
হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা প্রথমে সম্মুখের সারি পূর্ণ করবে। অত:পর তার সংলগ্ন পিছনের সারিকে পূর্ণ করবে। যদি কম্তি-ঘাটতি কিছু থাকে, তা থাকবে সর্বশেষ সারিতে।
অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায় আগের সারি পূর্ণই হয় নি। অথচ পরের কাতার অর্ধেক হয়ে গেছে। কিভাবে আমরা সুন্নাতে বরখেলাপ করছি!
হযরত নোমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। “যখন আমরা সলাতের উদ্দেশ্যে দাড়াতাম, রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের সারি সোজা করতেন। আর যখন আমরা সোজা হয়ে যেতাম তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন।” [আবু দাউদ, মিশকাত হা/১০২৯।]
এই হাদীসেরও বিরোধিতা আমাদের সমাজে প্রচলিত। আমাদের ইমাম সাহেবরা এটা বিরোধিতা করে থাকেন। তারা কাতার সোজা করতে বলেন না। অথচ এটা সুন্নাত। কেউ কেউ কাতার সোজা করতে বলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, সালাতে কি কাতার সোজা হবে আকাশ থেকে? নাকি পায়ের সাথে পা মিলাতে।
এজন্যই শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর “সিফাতু সলাতিন নাবী” বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সলাতে প্রচলিত ভুল গুলো উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সলাতের ইকামতের পর কাতার সোজা করার কথা না বলা একটি ভুল। কারণ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে এটার উপর আমল করার কথা রয়েছে। বুখারী শরীফে রয়েছে। সলাতের ইকামত বলার পর রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন, কাতার সোজা কর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দাড়াও। [রাসুলুল্লাহ এর নামায, অনুবাদ-এ এন এম সিরাজুল ইসলাম,বিশ্ব প্রকাশনী, পৃষ্ঠা-১৬৫-১৬৭]
অথচ আমাদের ইমাম সাহেবরা এই হাদীসের উপর কোন আমল করছেন না। তাই ইকামত শেষে কাতার সোজা করার কথা ইমামকে বলতেই হবে বলে শায়খ আলবানী বলেছেন।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে, হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি) হতে বর্ণিথ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের) প্রথম সারির উপরে সলাত প্রেরণ করেন অর্থ্যাত অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূলুল্লাহ (সা) আবারও বললেন,নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুন: জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূল বললেন, হ্যাঁ, দ্বিতীয় সারির উপরেও। অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা তোমাদের সারি সোজা করবে, তোমাদের বাহুমূলসমূহকে পরষ্পর সমান রাখবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতে বাহুমূলকে নরম রাখবে। (অর্থ্যাত কেউ ধরে সোজা করতে চাইলে তাহার আনুগত্য করবে) এবং তোমাদের মধ্যকার ফাকঁসমূহকে ভরে ফেলবে। কেননা, শয়তান তোমাদের মধ্যে হাযফের মত ঢুকে পড়ে। হায্ফ হলো ছোট কাল ভেড়ার বাচ্চা।” [মিশকাত হা/১০৩৩]
আরও হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পরের সমান কর, সারির মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরে ফেল, তোমাদের ভাইদের হাত নরম থাকবে। এবং শয়তানের জন্য মাঝখানে ফাকা স্থান রাখবেন না। যেই ব্যক্তি সারিকে মিলান, আল্লাহ তাআলাও তাহাকে (অনুগ্রহের সাথে) মিলান। আর যেই ব্যক্তি সারিকে বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তাকে ( নিজ অনুগ্রহ হতে) বিচ্ছিন্ন করেন।–আবু দাউদ, নাসায়ীতেও অনুরূপ এসেছে। (মিশকাত হা/১০৩৪ )।
আবুল ক্বাসিম আল-জাদালী সুত্রে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনে বাশীর (রাযি) বলতে শুনেছি, “রাসূলুল্লাহ (সা) সমবেত লোকদেরকে দিকে ঘুরে দাড়িয়ে তিনবার বলিলেন: তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর।আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা করে দাড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নুমান (রাযি) বলেন, অত:পর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাটুর সাতে নিজের হাটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে।” [আবু দাউদ হা/৬৬২]
দেখুন সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ এ ব্যাপারে কত সতর্ক ছিলেন। বুখারী শরীফে পায়ের সাথে পা, কাধেঁর সাথে কাঁধ এবং গিটের সাথে গিটের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
আবু দাউদে কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে তীরের মতো করে। [ আবু দাউদ হা/৬৬৩]
কাতার সোজা সম্পর্কে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস: আল-বারাআ ইবনে আযিব (রাযি) সূত্রে বর্ণিত। “তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন।, আর বলতেন: তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন।” [আবু দাউদ হা/৬৬৫]
এ রকম অনেক হাদীস রয়েছে যা উল্লেখ করলে কলেবরই বৃদ্ধি হবে। এসব হাদীস থেকে আমাদের শিক্ষা:
- সলাতে ধনী গরীবের বা অন্য কোন মতের পার্থক্যে কোন বালাই নেই।
- সলাতে কাতার সোজা করতে হবে কেননা কাতার সলাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।
- সলাতে কাধেঁ কাধঁ, পায়ের সাথে পা মিলাতে হবে।
- যারা মিলিয়ে দাড়ায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত প্রদর্শন করেন।
- যারা মিলায় না তাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ হতে বিচ্ছিন্ন করেন।
- ঈমাম হিসেবে সলাত আদায় করলে কাতার সোজা করতে বলা ইমামের কর্তব্য ও এটা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাত।
- সলাতে ফাঁক হয়ে দাড়ালে শয়তান ফাক জায়গায় বসে।
- কেউ কাতার সোজা করতে চাইলে তাকে সহযোগীতা করা অবশ্যই কর্তব্য।
- কাতার সোজা করা সলাতের সৌন্দর্য।
আল্লাহ আমাদের কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার তওফিক দিন।