গরম পানিতে ইথানল মিশ্রিত করে নিঃশ্বাসের সাথে ভাপ নিলে করোনা ভাইরাস মারা যাবে?
অ্যালকোহল যেহেতু হাতে থাকা ভাইরাসকে নষ্ট করে সুতরাং অ্যালকোহল খেলে শরীরের ভেতরে থাকা করোনা ভাইরাসও নিশ্চয় মারা যাবে এই বিশ্বাসে হাজার হাজার ইরানী অ্যালকোহল খেয়েছিল। এর মধ্যে ৬০০ মরে গেছে। ২৫০০++ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে।
বাংলাদেশেও সম্প্রতি এমন একটা ‘তথাকথিত আবিষ্কার’ ভাইরাল হয়ে গেছে এবং অনেকগুলি টেলিভিশন চ্যানেল সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখিয়েছেও। মানুষজনকে ওইসব চ্যানেলের ফেসবুক পেইজের কমেন্টে অ্যালকোহল কোথায় পাওয়া যায় তা জানতে চেয়েছেও!
এ ব্যাপারে কিছু লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু
ডকটর নাভিদ সালেহ বেশ চমৎকার রেফারেন্সভিত্তিক একটা লেখা লিখেছেন।
তিনি বেশ হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ওয়ালা একটা একাডেমিক জার্নালের একজন সহযোগী সম্পাদক। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন এবং বর্তমানে ইউটি অস্টিনে রয়েছেন। তিনি কার্নেগি মেলন থেকে পিএইচডি করেছেন।
লেখাটা বাংলা করেছেন ঢাবির জেনেটিক এনজিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের মুহাম্মাদ সওগাত ভাই। সম্পাদনা করেছি আমি।
// 30% ইথানল (বা 24 মিলিগ্রাম/লি) গরম পানিতে মিশ্রিত করার পরে করোনাভাইরাসের ক্যাপসিড ধ্বংসের জন্য নিঃশ্বাসের সাথে নেওয়া পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়!
ইথানল বাষ্পের সম্ভাব্য ক্ষতি সমূহের মাঝে রয়েছে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ক্যান্সারের ঝুঁকি, জ্বালাপোড়া, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিসহ অন্যান্য বিষক্রিয়াগুলি হচ্ছে মিউটেজেনসিটি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং শারীরিক বিকাশে বাধা।
জ্বালানীতে এবং হাতের স্যানিটাইজার এ ব্যবহার হওয়ার কারণে, মানুষের উপর ইথানল বাষ্পের প্রভাবগুলি মূল্যায়নের জন্য ১৯৭০ এবং ১৯৯০ এর মধ্যে বেশ কিছু গবেষণা করা হয়েছে।
ক্যান্সার: যদিও ইথানলের কোনও প্রমাণিত কার্সিনোজেনসিটি নেই তবে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালকোহল সেবন ক্যান্সারে আক্রান্ত ঝুঁকি বাড়ায় (বিশেষত যদি শ্বাস নেওয়া হয়)। ধূমপায়ীদের জন্য এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
ইথানল নিঃশ্বাসের সাথে নেয়া হলে আফলাটোক্সিনের (চিনাবাদাম থেকে আসতে পারে), নাইট্রোসামিন (ভালসার্টন জাতীয় ওষুধে উপস্থিত হতে পারে), বা বেনজো পাইরিন (গ্রিলড বা দগ্ধকরণ খাবার খাওয়া থেকে উদ্ভাসিত হতে পারে) সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
এছাড়াও, ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা এবং কার্সিনজেনসিটি বৃদ্ধি পেতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাগুলি: ইথানল যদি ১০ মিলিগ্রাম / লিটার মাত্রায় নিঃশ্বাসের সাথে নেয়া হয়, তবে ইঁদুরে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অবসাদের সৃষ্টি হয়। এই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে ৯৪ মিলিগ্রাম / লিটার পর্যন্ত ইথানল ইনহেলেশনে মৃত্যু ঘটে ইঁদুরের।
এতে আরও বলা হয়েছে, যদি ২৪ মিলিয়ন মিনিট-এমজি /লিটার ১ মিনিটের জন্য নিঃশ্বাসের সাথে নেয়া হয় (৩০% ইথানল) তাহলে ইঁদুরগুলি অবশ্যই মারা যায়। সেরকম বা সেই মাত্রার চেয়ে বেশী মাত্রার, যেমন তথাকথিত বিজ্ঞানী আলীমুল ইসলামের ভাষায় ৪০% ইথানল নিঃশ্বাসের সাথে নিলে মানুষ বাচবে কিনা মরবে, তার কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ কী আছে?
এর কোন যৌক্তিক জবাব কি ওই তথাকথিত বিজ্ঞানী দিতে পারবেন?
এর কোন যৌক্তিক জবাব কি ওই তথাকথিত বিজ্ঞানী দিতে পারবেন?
মিউকোসাল জ্বালা: ১৯৫১ সালে পরিচালিত লেস্টার এবং গ্রিনবার্গের আরেকটি গবেষণায় জানা যায় যে, ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম / লিটার ইথানল নিঃশ্বাসে নেওয়া হলে চোখ-নাকের জ্বালা এবং কাশির উদ্রেক হয়েছে। এই গবেষণা মানুষের উপর করা হয়েছিল, আর তাই ইথানল বাষ্পে মানুষের এই জ্বালাপোড়া হবেই।
ফ্যাটি লিভার এবং সম্ভাব্য সিরোসিস: ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে একটি ইঁদুর ২৮,২২৪ মিনিট-মিলিগ্রাম / লিটার ইথানলের সংস্পর্শে থাকলে তা ফ্যাটি লিভারের কারণ হয়েছিল। যখন ইঁদুরগুলি ৭২০০০০ মিনিট-মিলিগ্রাম / লিটার এক্সপোজারের সাথে ছিল তখন লিভার ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের যা নিতে বলা হচ্ছে তার মাত্রা এর থেকে বহুগুন বেশী।
এছাড়াও মনে রাখবেন যে ইথানল নিঃশ্বাসের সাথে নিলে ফুসফুসে সংক্রামিত ভাইরাসের কিছুই করবে না।
ভাইরাসগুলি যে প্রক্রিয়াটির দ্বারা বিস্তার করে তা হল এগুলি একটি কোষকে সংক্রামিত করে এবং তারপরে কোষের ভেতরে অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে বিস্তার লাভ করে।
ইথানল বাস্প ভাইরাসগুলি খুঁজেই পাবে না, ভাইরাসের বিস্তার বন্ধের জন্য তার দ্বিস্তরের লিপিড আবরণ নষ্ট করা তো দুরের কথা!
বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, এই লোকটির কোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নেই। তার প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করবেন না। //
সস্তা চমক দেখানো বিজ্ঞানী এবং মিডিয়া থেকে সাবধানে বেঁচে থাকুন।