প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না-
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
প্রশ্ন:
রমজান মাসে যেসব মুসলিম সিয়াম পালন করে না তাদের সাথে আচার-আচরণ কেমন হওয়া উচিত? এবং তাদেরকে রোজা রাখার প্রতি দাওয়াত দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি কোনটি?
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে ঐ সমস্ত মুসলমানকে রোযা রাখার প্রতি দাওয়াত দেয়া, রোজা রাখার প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ মহান ইবাদত পালনে অবহেলা করা থেকে তাদেরকে সাবধান করা ওয়াজিব।
১) তাদেরকে অবহিত করা যে, রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ইসলামে রোজার মর্যাদা অতি মহান, ইসলাম যে ভিত্তিগুলোর উপর নির্মিত রোজা সেগুলোর অন্যতম।
২) রোজা পালনের মহান প্রতিদান তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা পালন করবে তাঁর পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” [আল-বুখারী (৩৮) ও মুসলিম (৭৬০)]
তিনি আরো বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে, রমজানের রোজা পালন করে আল্লাহর উপর তার এই অধিকার এসে যায় যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা তার জন্মস্থান থেকে বের না হোক। সাহাবায়ে কেরাম বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি মানুষকে এ সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ১০০টি স্তর আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। দুই স্তরের মধ্যে ব্যবধান হল আসমান ও যমীনের ব্যবধানের ন্যায়। আপনারা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন তখন জান্নাতুল ফেরদাউস চাইবেন। ফেরদাউস হচ্ছে- সর্বোত্তম জান্নাত ও সুউচ্চ জান্নাত। এর উপরে হচ্ছে- আর-রহমানের (পরম দয়ালুর) আরশ। সেখান থেকে জান্নাতের নহরগুলো প্রবাহিত হয়।” [সহিহ বুখারী (৭৪২৩)]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন: রোজা আমার-ই জন্য, আমিই এর প্রতিদান দিব। রোজাদার আমার জন্য যৌন চাহিদা ও পানাহার ত্যাগ করে। রোজা হচ্ছে- ঢালস্বরূপ। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি রয়েছে। একটি ইফতারের সময়। অন্যটি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাত করবে। নিশ্চয় রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের সুবাসের চেয়েও সুগন্ধিময়।” [সহিহ বুখারী (৭৪৯২) ও সহিহ মুসলিম (১১৫১)]
৩) রোজা না-রাখার ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। পরিষ্কার ধারণা দেয়া যে, রোজা না-রাখা কবিরা গুনাহ। ইবনে খুযাইমাহ (১৯৮৬) ও ইবনে হিব্বান (৭৪৯১) আবু উমামা আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুইজন মানুষ এসে আমার দুইবাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেলো। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল: পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম: আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল: আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠে গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম: এটা কিসের শব্দ? তারা বলল: এটা জাহান্নামী লোকদের চিৎকার। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে এল যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: এরা কারা? তিনি বললেন: এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণের আগে ইফতার করত।”
শাইখ আল-আলবানী ‘সহীহ মাওয়ারিদ আজ-যামআন’ (১৫০৯) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেন এবং হাদিসটির শেষে টীকা লিখে বলেন: “আমি বলি – এই শাস্তি হল তাঁর জন্য যে রোজা রেখেছে; কিন্তু ইফতারের সময় হওয়ার পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করে ফেলেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি মূলতই রোজা রাখেনি তার অবস্থা কি হতে পারে?! আমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা ও সুস্থতা প্রার্থনা করছি।”
৪) রোজা পালন করা যে সহজ, এতে যে কি আনন্দ, খুশি, তুষ্টি, মনের প্রশান্তি ও অন্তরের স্বস্তি রয়েছে তা বর্ণনা করা। কুরআন তেলাওয়াত ও কিয়ামুল লাইলের মাধ্যমে দিবানিশি ইবাদতে মশগুল থাকার যে মজা তা তুলে ধরা।
৫) রোজা, রোজার গুরুত্ব ও রোজার মাসে একজন মুসলিমের করণীয় বিষয়ক কিছু আলোচনা শুনার উপদেশ দেয়া এবং এ বিষয়ক কিছু লিফলেট পড়তে দেয়া।
৬) কোমল ভাষা ও উত্তম কথা দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে যাওয়া ও নসীহত করা। সাথে সাথে তাদের হেদায়াত ও মাগ্ফিরাতের জন্য দোয়া করতে থাকা।
আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য ও আপনার জন্য শক্তি ও সামর্থ্য প্রার্থনা করছি। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব