প্রশ্ন: ই‘তিকাফ এবং ই‘তিকাফকারীর বিধান কী?

 গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
 বিভাগ/অধ্যায়ের নামঃ ছিয়াম (রোযা)
 লেখক/সংকলক/অনুবাদকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)


প্রশ্ন: ই‘তিকাফ এবং ই‘তিকাফকারীর বিধান কী?

উত্তর: ই‘তিকাফ হচ্ছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য মসজিদে অবস্থান করা। লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য ই‘তিকাফ করা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ﴾ [البقرة: ١٨٧]
“মসজিদে ই‘তিকাফ করা অবস্থায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৭] সহীহ বুখারীতে প্রমাণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ করেছেন, তাঁর সাথে ছাহাবায়ে কেরামও ই‘তিকাফ করেছেন।[1] ই‘তিকাফের এ বিধান শরী‘আতসম্মত। তা রহিত হয়ে যায় নি। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেছেন, এমনকি আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরা ই‘তিকাফ করেছেন।”[2]
সহীহ মুসলিমে আবু সাঈ‘দ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাযানের প্রথম দশকে ই‘তিকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় দশকে ই‘তিকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন,
«إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِي إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ»
“নিশ্চয় আমি রামাযানের প্রথম দশকে ই‘তিকাফ করে এ রাত্রি (লায়লাতুল কদর) অনুসন্ধান করেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে ই‘তিকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগন্তুক কর্তৃক আমাকে বলা হয়েছে, নিশ্চয় উহা শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ই‘তিকাফ করতে চায়, সে যেন ই‘তিকাফ করে।”[3]
অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে ই‘তিকাফ করেছে। ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, ই‘তিকাফ করা যে সুন্নাত সে সম্পর্কে আলিমদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ আমার জানা নেই।’
তাই কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমার দলীলের ভিত্তিতে ই‘তিকাফ করা সুন্নাত।
ই‘তিকাফ করার স্থান হচ্ছে, যে কোনো শহরে অবস্থিত মসজিদ। যেখানে জামাতে সালাত অনুষ্ঠিত হয়। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “মসজিদসমূহে ই‘তিকাফ করা অবস্থায়..।” উত্তম হচ্ছে জুমু‘আর মসজিদে ই‘তিকাফ করা। যাতে করে জুমু‘আ আদায় করার জন্য বের হতে না হয়। অন্য মসজিদে ই‘তিকাফ করলেও কোনো অসুবিধা নেই, তবে জুমু‘আর জন্য আগে ভাগে মসজিদে চলে যাবে।
ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, নফল সালাত প্রভৃতিতে মাশগুল থাকা। কেননা ই‘তিকাফের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটা। মানুষের সামান্য কথাবার্তায় কোনো অসুবিধা নেই বিশেষ করে কথা যদি উপকারী হয়।
ই‘তিকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস ও স্ত্রী সোহাগ বা শৃঙ্গার প্রভৃতি হারাম। মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ভাগে বিভক্ত:
১. জায়েয। শরী‘আত অনুমদিত ও অভ্যাসগত যরূরী কাজে বের হওয়া। যেমন জুমু‘আর সালাতের জন্য বের হওয়া, পানাহার নিয়ে আসার কেউ না থাকলে সে উদ্দেশ্যে বের হওয়া। অযু, ফরয গোসল, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া।
২. ওয়াজিব নয় এমন নেকীর কাজে বের হওয়া। যেমন, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া। তবে ই‘তিকাফ শুরু করার সময় এসমস্ত কাজের জন্য বের হওয়ার যদি শর্ত করে নেয়, তবে জায়েয হবে। অন্যথায় নয়।
৩. ই‘তিকাফের বিরোধী কাজে বের হওয়া। যেমন বাড়ী যাওয়া বা কেনা-বেচার জন্য বের হওয়া। স্ত্রী সহবাস করা। এ সমস্ত কাজ কোনোভাবেই ই‘তিকাফকারীর জন্য জায়েয নয়।

Post a Comment

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال