সালাতে (নামাযে) রাফয়িল ইয়াদাইন (দুইহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো) এবং সশব্দে (উচ্চস্বরে) আমীন বলা সংক্রান্ত
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
সালাত (নামাজ) হচ্ছে মুসলমান জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর এ ইবাদত ঐভাবেই করতে হবে যেভাবে নবী (সাঃ) করে দেখিয়ে গেছেন। এজন্য নবী (সাঃ) বলেছেন- “তোমরা সালাত (নামাজ)পড়, যেভাবে আমাকে পড়তে দেখ।” (বুখারী ও মুসলিম)
আমাদের বাংলাভাষী মুসলমান সমাজ না জেনেই মাযহাবী দোহাই দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সহীহ সুন্নাত পরিত্যাগ করি, যা অত্যান্ত অবাঞ্চনীয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলমান বলে থাকেন ‘রাফয়িল ইয়াদাইন’ হানাফী মাজহাবে নেই। শাফী এবং হাম্বলী মাজহাবের।আমাদের দেশের মুসলিম সমাজের আলেমগণ ও সাধারণ মুসুল্লীগণ তাকবীরে তাহরীমা ব্যতিত উভয়হাত উত্তোলন করাকে বলে থাকেন উল্টা তাকবীর, আসলে তাকবীর কিভাবে উল্টা হয় আমার বোধগম্য নয়। আপনারা একটু চিন্তা করুন, যদি তাকবীর উল্টা হয় যেমন- আল্লাহু আকবর (আল্লাহ মহান বা আল্লাহ বড়)এর উল্টা কি হবে বা এর ভাবার্থই কি হবে ভেবে দেখুন। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে এথেকে ক্ষমা করুন। যাতে আমরা উল্টা তাকবীর না বলি বা না দেই। এখানে সঠিক কথা হচ্ছে আমরা যখন সালাতে দাঁড়াই এবং প্রথম তাকবীর ব্যতিত অন্য সব তাকবীরের সময় (হাদীসে বর্ণিত স্থানে)উভয়হাত উত্তোলন করাকে ‘রাফয়িল’ (উঠানো বা উত্তোলন) ‘ইয়াদাইন’ (হস্তদ্বয় বা উভয়হাত), বলুন এটাকে কিভাবে উল্টা তাকবীর বলে। এব্যাপারে কিছুলোক এও বলে যে, ঐ সময় (ইসলামের প্রথমযুগে) লোকেরা নাকি বগলের নিচে মূর্তি নিয়ে সালাত পড়তো, এজন্য উভয়হাত উঠাতো। নাউজুবিল্লাহ- এটা সাহাবীদের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে এথেকে বিরত রাখুন। আচ্ছা ধরুন, কেউ যদি বগলের নিচে মূর্তি নিয়ে সালাতে অংশগ্রহণ করে থাকে, তাহলেতো প্রথম তাকবীরেই হাত উঠানোর সময় এটা পরে যেত, কেন অন্যান্য তাকবীরের সময় হাত উঠানোর ব্যাপারে এ কথা বলেন। উচ্চস্বরে আমীন বলার ব্যাপারে বলে থাকেন, সালাতকালীন সময় নাকি কিছুলোক পিছন থেকে পলায়ন করত এজন্য উচ্চস্বরে আমীন বলত। সহীহ এবং সুনান হাদীসগ্রন্থগুলোর কোথাও পাবেন না এই ধরনের কথাবার্তা বা হাদীস রহিত হয়ে গেছে। এটাও সাহাবীদের বিরুদ্ধে চরম বেয়াদবী ছাড়া আর কি বলা যায়। আপনি উক্ত সুন্নাত পালন করতে চান না সেটা আপনার অভিরুচি, সে জন্য কেন সাহাবীদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যাচার তা আমার ভাবতে অবাক লাগে।
এখন আমার প্রশ্ন যে, কেন আমরা ইসলামকে এতভাগে বিভক্ত করি, কেনই বা এত মতানৈক্য। বুখারী মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসগ্রন্থেও হাদিসদ্বয় উল্লেখ আছে-
(ক) “নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “ইয়াহুদীরা ৭১ দল, খ্রী খ্রীষ্ঠানরা ৭২ দল আর আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে এবং বাকি সব দলই জাহান্নামী।আর ঐ দল হচ্ছে যারা কিতাবাল্লাহ, আমার সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবীদের পথ অনুসরণ করেছে, তারাই ঐ একটি দলের অন্তর্ভুক্ত।”
(খ) “নাবী করীম (সাঃ) তাঁর বিদায়ী হজ্বের খুতবায় বলেছেন-আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যারা এ দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো বিপথগামী হবেনা, আর জিনিস দু’টি হচ্ছে কিতাবাল্লাহ(কুরআন) ও সুন্নাতে রাসুল (হাদীস) ” কথা হলো-আমরা কোথায় পাব ঐ দিক নির্দেশনা। প্রথমটি হচ্ছে আল কুরআন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কুরআনের শরয়ী ব্যাখ্যা যা নাবী করীম (সাঃ) এর মুখ নিঃসৃত বানী, করতে আদেশ দিয়েছেন এবং যে সমস্ত কাজের অনুমোদন দিয়ে গেছেন বা হাদীস। মহান আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদের অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। আল্লাহর ঐ নিয়ামতের মধ্যে তিনি আমাদের দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান, বলার জন্য কণ্ঠনালী এবং কোন কিছু করা ও ভাবা বা শেখার জন্য সর্বউচ্চ নিয়ামত জ্ঞান দান করেছেন। আমরা যদি উক্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করি বা সঠিক ব্যবহার না করি তাহলে কাল কিয়ামতের ময়দানে আমরা সকলেই এজন্য জিজ্ঞাসিত হবো। তাই আমাদের উচিত জ্ঞান অন্বেষণ করা এবং জ্ঞানকে সঠিক কাজে লাগানো।
আর ঐ সমস্ত ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের বেশী বেশী পড়তে হবে কিতাবাল্লাহ (কুরআন) এবং নাবী (সাঃ) সুন্নাত বা সহি হাদীস গ্রন্থগুলো। আমরা যদি না পড়ি তাহলে কিভাবে বুঝবো এবং জানবো। যারা মাজহাবী দোহাই দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সহীহ সুন্নাত পালন থেকে নিজে বিরত রয়েছেন এবং অন্যদেরকেও বিরত রাখছেন, এ ব্যাপারে দেখুন আমাদের শ্রদ্ধেয় ইমামগণ কি বলেছেনঃ- ইমাম আবু হানীফা (রঃ) তাঁর আল হিদায়া গ্রন্থে-“হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাজহাব” এবং তাঁর অনুসারী অসংখ্য সঙ্গী-সাথীরা বহু কথা বর্ণনা করেছেন, আর সেগুলোর মূল সুর বা ধারা একটাই তা হল হাদীস আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব এবং ইমামদের যে সকল রায় হাদীস বিরোধী তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত। Imam Abu Hanifa Rahimahullah said: “When I say something contradicting the Book of Allah the Exalted or what is narrated from the Messenger (sallallaahu ‘alaihi wa sallam), then ignore my saying.” [Al-Fulaani in Eeqaaz al-Himam (p. 50)]
দেখুন-ইবনে আবেদীন ‘আল হাশিয়া’ কিতাবের ১ম খণ্ড ৬৩ পৃষ্ঠা এবং তাঁর রাস্মুল মুফতী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪র্থ পৃষ্ঠায় একথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে আবেদীন ইবনে হাম্মামের ‘শারহুল হেদায়াহ’ গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছেনঃ-মাজহাবের বিরুদ্ধে সহীহ বা বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়া গেলে এর উপরই আমল করতে হবে এবং সেটাই ইমামের মাজহাব। এর ফলে সে তাঁর মাজহাবের অনুসরণ থেকে বাদ যাবে না। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী বলেন, এটা তাদের সর্বউচ্চ তাকওয়া জ্ঞানের লক্ষন। তারা ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন যে তারা সকল হাদীসের ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। ইমাম শাফী (রঃ) অনুরূপ বলে গেছেন-তাদের কোন মাসাআলা সহীহ হাদীস বিরোধী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে সহীহ হাদীস মতে চলতে হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন-আমরা কোথা থেকে মাসাআলা গ্রহণ করেছি, তা জানার আগ পর্যন্ত আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করা জরুরী বা জায়েজ নয়। দেখুন-ইবনু আবদিল বার, পৃষ্ঠা নং ১৪৫, ইবনুল কাইয়েম ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৩০৯ এবং আশ-শা’রানী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৫৫। তাছাড়া আমি নিজেও একজন হানাফী মাজহাবের অনুসারী। যাহোক, যদি এ সংক্রান্ত ব্যাপারে লিখতে যাই তাহলে আকৃতি শুধু বড়ই হবে। এ সংক্রান্ত বহু নথি আছে যা লেখাটি কলেবরে বড় হয়ে যাবে এ জন্য উল্লেখ করতে পারছিনা।
মহান আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করুন, যাতে করে আমরা সহীহ হাদীসের আলোকে আমাদের আমলগুলো করতে পারি। নিম্নে কতিপয় তথ্য ‘রাফয়িল ইয়াদাইন’ (কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো) ও সশব্দে (উচ্চস্বরে)আমীন বলা সংক্রান্ত তথ্যাদি সহীহুল বুখারী ও মুসলিম এবং সুনান কিতাব- আবু দাউদ, মালিকী মুয়াত্তা, ইবনু নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ থেকে সংকলিত হাদীসগুলো খণ্ড নম্বর, হাদীস নম্বর, পৃষ্ঠা নম্বর, এবং প্রকাশনীর নামসহ উপস্থাপন করা হলঃ-(যাতে করে প্রমাণ খুজতে কষ্ট না হয়)
রাফয়িল ইয়াদাইন (দুইহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো)-
(১) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রাঃ)— সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয়হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর রুকু’তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদা ও রাব্বানা অলাকাল হামদ্ বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরূপ করতেন না। [সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৬৯৯, পৃষ্ঠা নং১০০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(২) মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রাঃ)—আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয়হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলতেন। তবে সিজদার সময় এরূপ করতেন না। [সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭০০, পৃষ্ঠা নং১০০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৩) ইসহাক ওয়াসিতি (রাঃ)—আবু কিলাবা(রঃ)হতে বর্ণিত, তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিশ(রাঃ)কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’হাত উঠাতেন। আর রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয়হাত উঠাতেন। আবার, যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয়হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরূপ করেছেন।[ সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭০১, পৃষ্ঠা নং১০১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৪) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবু বাকর আবু শায়বা, আমর আন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রাঃ)—সালিম এর পিতা ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে দেখেছি তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন উভয়হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার পূর্বে এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন তখনও অনুরূপভাবে হাত উঠাতেন। কিন্তু উভয় সিজদাহ’র মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না।[ সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭৪৫, পৃষ্ঠা নং১৪১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৫) মুহাম্মদ ইবনু রাফী (রাঃ)—- “ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয়হাত উঠাতেন। এমনকি তা তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। পরে যখন রুকু করার ইরাদা করতেন তখনও অনুরূপ করতেন। আবার রুকু থেকে যখন উঠতেন তখনও অনুরূপ করতেন। কিন্তু সিজদাহ থেকে যখন মাথা তুলতেন তখন এরূপ করতেন না।” [সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭৪৬, পৃষ্ঠা নং১৪১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৬) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া— “আবু কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিশ(রাঃ)কে দেখলেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বলে উভয়হাত উঠালেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন উভয়হাত উঠালেন।আর রুকু থেকে যখন মাথা উঠালেন তখনও আবার হাত উঠালেন। এবং পরে বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এরূপ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭৪৮, পৃষ্ঠা নং১৪২, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৭) আবু কামিল জাহদারী (রাঃ) মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিশ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ)তাকবীর (তাকবীরে তাহরীমা) বলে উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখনও কান বরাবর উভয়হাত উঠাতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ বলতেন তখনও অনুরূপ করতেন।” [সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৭৪৯, পৃষ্ঠা নং১৪২, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।এছাড়াও ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ মুসলিম শরীফ এর ২য় খণ্ডের ৭৫৮,৭৫৯,৭৬১ ও ৭৬২ নং হাদীস দেখুন।]
(৮) আহ্মাদ ইবনু হাম্বল— “সালিম থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে সালাত আরম্ভ করার সময় তাঁর দু’হাত স্বীয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। অনুরূপভাবে রুকু করার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরও তাঁকে হাত উঠাতে দেখেছি। কিন্তু তিনি দুই সিজদাহ’র মাঝখানে হাত উঠাতেন না।” [এই হাদিসটি অনুরূপ-বুখারী,মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহতে বর্ণিত আছে। সুনানু আবু দাউদ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং ৭২১, পৃষ্ঠা নং৩৯১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৯) ইবনুল মুসাফ্ফা আল হিমসী—আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ(সাঃ) সালাতে দাঁড়ানোর সময় নিজের দুইহাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকুতে যেত তখন দুইহাত উপরে তুলতেন। এবং রুকু হতে উঠার সময়ও স্বীয় উভয়হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ বলতেন। তিনি দুই সিজদাহ’র মধ্যে হাত উঠাতেন না এবং প্রত্যেক রুকুর জন্য তাকবীর বলার সময় তিনি হাত উঠাতেন এবং এরূপ সালাত শেষ করতেন।” [সুনানু আবু দাউদ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং ৭২২, পৃষ্ঠা নং৩৯২, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১০) উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার—আবু ওয়ায়েল ইবনু হুজর(রাঃ) হতে বর্ণিত, “তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করি। তিনি তাকবীর বলার সময় নিজের দুইহাত উঠাতেন, পরে তিনি তাঁর হাত কাপড়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি যখন রুকুর ইরাদা করেন, তখন স্বীয় হাত দু’খানা বের করে উপরে উঠাতেন। তিনি রুকু হতে মাথা উঠানোর সময়ও দু’হাত উপরে উঠান। অতঃপর তিনি সিজদায় যান এবং স্বীয় চেহারা দুইহাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করেন। অতঃপর তিনি সিজদাহ হতে মাথা উঠাবার সময়ও স্বীয় হাত দু’খানা উত্তোলন করেন। এভাবে তিনি তাঁর সালাত শেষ করেন। রাবী মুহাম্মদ বলেন, এ সম্পর্কে আমি হাসান ইবনু আবুল হাসানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এমনি ছিল রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সালাত (নামায) আদায়ের নিয়ম। যে ব্যক্তি এর অনুসরণ করেছে-সেতো করেছে এবং যে ব্যক্তি ত্যাগ করেছে- সেতো তা ত্যাগ করেছে-মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ(রঃ) বলেন, হাম্মাম-ইবনু জাহাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উক্ত বর্ণনায় সিজদাহ হতে মাথা উঠানোর সময় হাত উঠানোর কথা উল্লেখ্য নেই।” [সুনানু আবু দাউদ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং ৭২৩, পৃষ্ঠা নং৩৯২-৩৯৩, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এ ছাড়াও আবু দাউদ এর পরবর্তী হাদীসগুলো যেমন- ৭২৬,৭৩০,৭৪৩,৭৪৪ ও ৭৪৫ নং হাদীসে বর্ণিত আছে।]
(১১) আব্দুল্লাহ ইবনু উমার(রাঃ)— “হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) যখন সালাত (নামায)আরম্ভ করার সময় উভয়হাত কাঁধ বরাবর তুলতেন এবং যখন রুকু হইতে মাথা তুলতেন তখনও দুইহাত অনুরূপভাবে তুলতেন এবং বলতেন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বানা অলাকাল হামদ্। অবশ্য সিজদাহ’র সময় তিনি হাত উঠাতেন না।” [মুয়াত্তা মালিক, ১ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ-৪, রেওয়াত নং১৬, পৃষ্ঠা নং১২৮, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১২) সলিম ইবনু আবদুল্লাহ(রঃ)হতে বর্ণিত,আবদুল্লাহ “ইবনু উমার (রাঃ)যখন নিচের দিকে ঝুঁকতেন ও মাথা উপরে তুলতেন তখন তাকবীর বলতেন। নাফি (রঃ) বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু উমার সালাত (নামায) আরম্ভ করার সময় উভয়হাত কাঁধ বরাবর তুলতেন। আর যখন রুকু হতে মাথা তুলতেন তখন দুইহাত কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত তুলতেন।” [মুয়াত্তা মালিক, ১ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ-৪, রেওয়াত নং১৬, পৃষ্ঠা নং১২৮, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৩) আলী ইবনু হুজর(রঃ)— “মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস(রাঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) দেখেছি,তিনি যখন তাকবীর বলতেন এবং রুকু থেকে মাথা তুলতেন তখন স্বীয় উভয়হাত উঠাতেন যা তাঁর কানের নিম্নভাগ (লতি) পর্যন্ত পেীছত।” [সুনান আন নাসাঈ, ২য় খণ্ড, হাদিস নং১০২৭, পৃষ্ঠা নং৯৮, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃবাংলাদেশ।]
(১৪) কুতায়বা(রঃ)— “আবদুল্লাহ ইবনু উমার(রাঃ)থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে দেখেছি, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন স্বীয় উভয়হাত তুলতেন কাঁধ পর্যন্ত। এ রকম হাত তুলতেন যখন তিনি রুকু করতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।” [সুনান আন নাসাঈ, ২য় খণ্ড, হাদিস নং১০২৮, পৃষ্ঠা নং৯৯, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৫) আলী ইবনু মুহাম্মদ, হিশাম ইবনু আম্মার ও আবু উমার যারীর(রঃ)—ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে দেখেছি, তিনি যখন সালাত শুরু করতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন এবং রুকুতে যেতেন ও যখন তিনি তাঁর মাথা রুকু থেকে উঠাতেন (তখনও হাত উঠাতেন)। তবে, তিনি দুই সিজদাহ’র মাঝখানে হাত উঠাতেন না।” [সুনান আন নাসাঈ, ২য় খণ্ড, হাদিস নং১০২৮, পৃষ্ঠা নং৯৯, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৬) হুমায়ুদ ইবনু মাসআদা(রঃ)— মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস(রাঃ)থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)যখন তাকবীর বলতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাত উভয় কানের কাছাকাছি উঠাতেন। আর যখন তিনি রুকুতে যেতেন, তখন অনুরূপ করতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপ করতেন। [সুনান ইবনু মাজাহ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং৮৫৯, পৃষ্ঠা নং৩২৮, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৭) মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার(রঃ)— আবু হুমায়দ সায়ীদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অন্যান্য দশ সাহাবীর একজন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর সালাত সম্পর্কে অধিক অবহিত। তিনি যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং তিনি তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, এরপর তিনি বলতেন আল্লাহু আকবর। আর যখন তিনি রুকু করার ইরাদা করতেন তখন তিনি তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি বলতেন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ তখন তিনি তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতেন আর যখন তিনি দ্বিতীয় রাকাত থেকে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, যেমন তিনি সালাত শুরু করার সময় করতেন। [সুনান ইবনু মাজাহ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং৮৬২, পৃষ্ঠা নং৩২৯, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৮) মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার(রঃ)—আব্বাস ইবনু সাহল সায়িদী(রঃ) বর্ণিত, “একদা আবু হুমায়দ, উসায়দ সায়িদী, সাহল ইবনু সাদ ও মুহাম্মদ ইবনু মাস্লামা(রাঃ) একত্রিত হয়ে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সালাত সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলেন; তখন আবু হুমায়দ(রাঃ) বলেন- আমি তোমাদের চেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। রাসুলুল্লাহ(সাঃ)সালাতে দাঁড়াতেন, এরপর তিনি তাকবীর বলতেন এবং তাঁর উভয়হাত উঠাতেন। এরপর তিনি তাকবীর বলে রুকুতে যাওয়ার সময় হাত উঠাতেন। এরপর তিনি দাঁড়াতেন এবং তাঁর দু’হাত উঠাতেন এবং এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে, যাতে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাস্থানে এসে যেত।” সুনান ইবনু মাজাহ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং৮৬২, পৃষ্ঠা নং৩২৯, প্রকাশণী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। ইবনু মাজাহ’তে এ সংক্রান্ত আরো হাদীস দেখুন- ৮৬৪ থেকে ৮৬৭ নং পর্যন্ত।
স্বশব্দে আমীণ (উচ্চস্বরে)বলাঃ-
(১) আতা (রঃ) বলেন, আমীন হল দু’আ। তিনি আরো বলেন, “আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) ও তার পিছনের মুসল্লীগণ এমনভাবে আমীন বলতেন যে মসজিদে গুমগুম আওয়াজ হতো। আবু হুরায়রা (রাঃ) ইমামকে ডেকে বলতেন, আমাকে আমীন বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। নাফি(রঃ)বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কখনই আমীন বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদের (আমীন বলার জন্য)উৎসাহিত করতেন। আমি তাঁর কাছ থেকে এ সম্পর্কে হাদিস শ্তনেছি।” [সহীহ বুখারী,২য় খন্ড, অনুচ্ছেদ-৫০২, পৃষ্ঠা নং ১২০ও১২১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(২) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রঃ)—- “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইমাম যখন আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা, যার আমীন (বলা) ফিরিশতাদের আমীন (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন।” [সহীহ বুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৪, পৃষ্ঠা নং ১২১ প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৩) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রঃ)—- “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) আমীন বলে, আর আসমানের ফিরিশ্তাগণ আমীন বলেন এবং উভয়ের আমীন একই সময়ে হলে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৫,পৃষ্ঠা নং ১২১ প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত আরো দেখুন ৭৪৬ নং হাদিস।]
(৪) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রঃ) — “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন, তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা, যে, ব্যক্তি ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে একই সময় আমীন বলবে। তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন।” [সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৭৯৮, পৃষ্ঠা নং ১৬০ও ১৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৫) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রঃ) —- “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, ইমাম যখন গাইরিল মাগ—- ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন বলবেন, তার পিছনের ব্যক্তি মুক্তাদি আমীন বলবে এবং তার বাক্য আকাশবাসীর (ফিরিশতা) বাক্যের অনুরূপ একই সময়ে উচ্চারিত হবে,তখন তার পূর্ববর্তী সমূদয় পাপ মোচন হয়ে যাবে।” [সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৮০৩, পৃষ্ঠা নং ১৬২, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত আরো দেখুন ৭৯৯-৮০২ নং হাদিস।]
(৬) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ইমাম যখন আমীন বলে, তোমরাও তখন আমীন বলো। কেননা, যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাতে মিলে যাবে,তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন। [সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৮১০, পৃষ্ঠা নং ১৭৮, প্রকাশনী- ইসলামিক সেন্টার বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত আরো দেখুন ৮১১-৮১৫ নং হাদিস।]
(৭) মুহাম্মদ ইবনু কাছীর (রঃ) —ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন পাঠ করার পর জোরে ‘আমীন বলতেন’। [আবু দাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩২, পৃষ্ঠা নং ৩৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৮) মাখলাদ ইবনু খালিদ (রঃ)ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করা কালে তিনি উচ্চস্বরে আমীন বলেন এবং (সালাত শেষে) ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরান এভাবে যে, – আমি তাঁর গন্ডদেষের সাদা অংশ পরিষ্কারভাবে দেখি। [আবু দাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৩, পৃষ্ঠা নং ৩৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(৯) নাসর ইবনু আলী (রঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) এর চাচাত ভাই আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম “গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন” পাঠের পরে এমন জোরে আমীন বলতেন যে প্রথম কাতারে তাঁর নিকটবর্তী লোকেরা তা শুনতে পেত। [আবু দাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৪, পৃষ্ঠা নং ৩৭, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১০) আল কানাবী (রঃ) — ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যখন ইমাম আমীন বলবে , তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যে ব্যক্তির আমীন শব্দ ফিরিশতাদের আমীন শব্দের সাথে মিলবে ,তার পূর্ব জীবনের সমস্ত গুনাহ মার্জিত হবে।” [ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন। আবু দাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৬, পৃষ্ঠা নং ৩৮, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১১) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলছেন, “যখন ইমাম আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা যার আমীন ফিরিশতাদের আমীন এর সাথে একত্রে উচ্চারিত হয় তার পূর্বের গুনাহ মাফ করা হয়।” [মুয়াত্তা মালিক ১ম খণ্ড,পরিচ্ছেদ নং ১১, পৃষ্ঠা নং ১৪০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, “যখন ইমাম ‘গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’ বলবে তখন তোমরা আমীন বল। যাহার বাক্য ফিরিশতাদের (আমীন)বাক্যের সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের গুনাহ মাফ করা হবে।” [মুয়াত্তা মালিক ১ম খণ্ড,পরিচ্ছেদ নং১১, রেওয়াত নং৪৫,পৃষ্ঠা নং১৪০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৩) আমর ইবনু উসমান (রঃ)—আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন তিলাওয়াতকারী আমীন বলে , তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা, ফিরিশতাগনও আমীন বলে থাকেন। অতএব, যার আমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার মত হবে,আল্লাহপাক তার পূর্বের পাপ মার্জনা করবেন।” [সুনানু ইবনু নাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯২৮, পৃষ্ঠা নং ৫৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৪) মুহাম্মদ ইবনু মানসুর(রঃ)—আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। “তিনি বলেন,যখন তিলাওয়াতকারী (ইমাম) আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা, ফিরিশতাগনও আমীন বলে থাকেন। অতএব, যার আমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার মত হবে,আল্লাহপাক তার পূর্বের পাপ মার্জনা করবেন।” [সুনানু ইবনু নাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯২৯, পৃষ্ঠা নং ৫৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৫) ইসমাইল ইবনু মাসুদ (রঃ) — আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ইমাম ‘গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’ বলবে তখন তোমরা আমীন বল। কেননা, ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। ইমামও আমীন বলে থাকেন, যার আমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার মত হবে, আল্লাহপাক তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।” [সুনানু ইবনু নাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩০, পৃষ্ঠা নং ৫৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৬) আবু বকর ইবনু আবু শায়বা ও হিসাম ইবনু আম্মার (রঃ) — আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ক্বারী (ইমাম) আমীন বলে, তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা, ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। আর যার আমীন বলা, ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” [সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫১, পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৭) বকর ইবনু খালফ ও জামীল ইবনু হাসান ও আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারাহ মিসরী ও হাশিম ইবনু কাশিম হাররানী —আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলছেনঃ “যখন ইমাম আমীন বলে, তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা, যার আমীন ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায়, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” [সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫২, পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৮) মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা আমীন বলা ছেড়ে দিয়েছে। অথচ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন গাইরিল—ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন বলতেন; তখন তিনি বলতেন আমীন। এমনকি প্রথম সারির লোকেরা তা শুনতে পেত এবং এতে মসজিদ গুঞ্জরিত হত। [সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫৩, পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।]
(১৯) ইসহাক ইবনু মানসুর (রঃ) —আয়েশা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। ইয়াহুদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এত ঈর্ষান্বিত হয় না,যতটা না তারা তোমাদের সালাত ও আমীনের উপর ঈর্ষান্বিত হয়। [সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫৬, পৃষ্ঠা নং ৩২৭, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত আরো দেখুন ৮৫৪,৮৫৫ ও ৮৫৭ নং হাদিস।]
পরিশেষে; মুসলমান ভাই-বোনদের জন্য ছোট একটি উপমা পেশ করতে চাই- যেমন ধরুন আপনি কোন বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিলেন, কর্তৃপক্ষের দেয়া কাগজ আপনি লিখে শেষ করে ফেলেছেন, কিন্তু আপনি আপনার লেখা শেষ করতে পারেননি কারন, আপনার লেখার ভাব-বিশ্লেষণ ব্যাপক, সুন্দর হস্তাক্ষর ইত্যাদি, এই জন্য আপনাকে আরো অতিরিক্ত কাগজ নিতে হবে সুন্দরভাবে প্রশ্নোওর সম্পাদন করতে, এবং আপনি যদি তা সঠিকভাবে লেখেন বা সম্পাদন করেন অবশ্যই আপনি অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় বেশী নম্বর পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। সুন্নাত তদ্রুপ আপনি যত বেশী বেশী সুন্নাত পালন করবেন ততবেশী রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ অবলম্বনকারী হবেন এবং বেশী বেশী নেকী অর্জন করতে পারবেন। উল্লেখিত হাদিসগুলোর আলোকে সকলেই একমত হবেন যে,নাবী কারীম (সাঃ) রাফয়িল ইয়াদাইন করতেন এবং উচ্চস্বরে (ইমাম) আমীন বলতেন সাথে সাথে পিছনের লোকেরাও উচ্চস্বরে আমীন বলতেন। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সঠিক এবং সহী হাদীসের আলোকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন। ।
বিঃদ্রঃ- উপরোক্ত লেখার মাধ্যমে আমি কোন ব্যক্তির মনে দাগ কাটার জন্য কিছু লিখিনি। তারপরও যদি ভুল বশতঃ লেখার মাধ্যমে কোন প্রকার ত্রুটি হয়ে থাকে, অনুগ্রহ পূর্বক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমাদের করণীয়ঃ সকল মুসলমানের উচিত সহীহ হাদীস মোতাবেক জীবনের প্রত্যকটি আমল করা।