চীন থেকে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৮৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার মারা গেলেন উহান হাসপাতালের পরিচালক লু জাইমিং। এছাড়া চীনসহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০টি দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৪৩৩ জন। এই প্রথম দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত ও মৃতের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে সংক্রমণের ধরন ও বয়সভেদে ঝুঁকির প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে।
চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিসিডিসি) এই প্রতিবেদন গতকাল সোমবার চাইনিজ জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশ করা হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া কভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হয়েছে এমন ৭২ হাজার ৩১৪ জনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
সিসিডিসির তথ্যানুসারে, বয়স্ক ও অসুস্থদের কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। হয়েছেও তাই- আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই ছিল আগে থেকে হালকা অসুস্থ বা বয়স্ক। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে স্বাস্থ্য কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ জন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া চীনের হুবেই প্রদেশে মৃত্যু হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ, যেখানে গোটা দেশে এই হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে গড় মৃত্যুহার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সংক্রমণ তেমন আশঙ্কাজনক ছিল না। মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মারাত্মক ছিল। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আশি বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যুহার সর্বাধিক, ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার সবচেয়ে কম, মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ৪০, ৫০, ৬০ ও ৭০ বছর বা তার কাছাকাছি বয়সীদের মৃত্যুহার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, ১ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৮ শতাংশ।
এছাড়া লিঙ্গভেদে মৃত্যুহারে সামান্য পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। নারী ও পুরুষের বেলায় এই মৃত্যুহার যথাক্রমে ২ দশমিক ৮ শতাংশ ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ। হৃদরোগীদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এর পরেই ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
প্রতিবেদনে মহামারী সামাল দিতে শহরগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা, একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্যের সম্প্রচার (যেমন: হাত ধোয়া, মুখোশ পরা ও শরীরের যত্ন নেয়া) এবং সরকারের সব বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এর পরপরই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার হুবেই প্রদেশ কার্যত চীন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রদেশটির বাসিন্দাদের বাইরে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া হুবেই কর্তৃপক্ষ পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য সরবরাহের গাড়ি ও নাগরিক পরিষেবার কাজে নিয়োজিত পরিবহন ছাড়া প্রদেশটিতে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। একইভাবে বেইজিং পৌর কর্তৃপক্ষও ছুটি শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগরিকদের ১৪ দিন স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি