Covid 19 এখন এক আন্তর্জাতিক আতঙ্কের নাম। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি আকারে। প্রায় প্রতিটি দেশে আক্রান্ত হচ্ছে বহু সংখ্যক মানুষ।
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি করোনা ভাইরাস (Covid 19) সংক্রমনের লক্ষন এবং এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাচানোর উপায়। আজ আমরা সংক্ষেপে জেনে নেব Covid 19 আক্রান্ত রোগিদের কেমন অভিজ্ঞতা হয় সেই ব্যাপারে।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা। এরকম সেরে উঠা ৫ জন রোগীর সাথে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমেরিকান সংবাদ সংস্থা, বিজনেস ইনসাইডার।
এই প্রতিবেদন অনূযায়ী, Covid 19 সংক্রমণের অভিজ্ঞতা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সংক্রমণের মাত্রার উপর অভিজ্ঞতার তীব্রতা নির্ভর করে। আর সংক্রমণের মাত্রা নির্ভর করে রোগিদের বয়স, সংক্রমণের আগের শারিরীক অবস্থা ইত্যাদি কিছু বিষয়ের উপর। সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীদের অবস্থাও হতে পারে ভিন্ন। কারো ক্ষেত্রে সুস্থ হলে আর কোন সমস্যাই থাকে না। আবার কারো ক্ষেত্রে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়।
কেস স্টাডি – ১
আমেরিকান নাগরিক ক্লে বেন্টলি একজন মাঝবয়সি মানুষ। তিনি বেশ অনেক দিন থেকেই গ্রন্থিবাত রোগ (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) এ ভুগছিলেন।
স্থানীয় গির্জায় একটি প্রার্থনায় যোগ দেবার পরই সম্ভবত তিনি আক্রান্ত হন Covid 19 দ্বারা। ১লা মার্চ থেকে তিনি বেশ অসুস্থ বোধ করা শুরু করেন এবং ৬ মার্চ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বিজনেস ইনসাইডার কে জানান যে এসময় তার বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এ সময় তার ফুসফুসে তরল জমা হয়েছিল। আর শরীর ছিল মারাত্মক দুর্বল। একারণে তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে উঠে দাড়াতে পারছিলেন না।
বেন্টলির ভাষায় , ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি শ্বাস নিতে পারব না। এমনকি আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতাম না।’
এর পর তিনি হাস্পাতালে যথারীতি চিকিৎসা নিতে থাকেন। ফলস্বরূপ ১৭ মার্চ থেকে তিনি শারীরিক ভাবে ভাল বোধ করতে থাকেন। এ সময় চিকিৎসকরা জানান যে তার ফুসফুসে যে তরল জমা হয়েছিল তা আর নেই।
কেস স্টাডি ২
নিউইয়র্কের বাসিন্দা টড হারম্যান। বয়স ৪৪ বছর। সম্প্রতি তার সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিল। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে যখন তিনি প্রায় সেরে উঠছিলেন, তখন একদিন তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে থাকেন। সন্দেহ হওয়াতে পরদিন তিনি করোনা টেস্টে অংশ নেন। রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
হারম্যানের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল শ্বাসকষ্ট। তার নিঃশ্বাস ছোট হয়ে গিয়েছিল। নিজের বাড়িতে এক রুম থেকে অন্য রুমে হেটে গেলেও তার শ্বাসকষ্ট শুরু হত। পাশাপাশি শরীর দুর্বল লাগতো এবং কিছুটা মাথা ব্যাথাও থাকতো।
কেস স্টাডি ৩
ওয়াশিংটনের বাসিন্দা এলিজাবেথ স্নেইডার। ২২ ফেব্রুয়ারিতে তার বাসায় একটা অনুষ্ঠান হয় এবং ধারণা করা হয় সেখান থেকে তিনি আক্রান্ত হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অন্যান্য সদস্যরাও যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অসুস্থতার কথা জানাচ্ছিলেন, তখন এলিজাবেথ বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং করোনা ভাইরাস টেস্টে অংশ নেন। তাতে তার শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অন্যান্য অনেক সদস্যদের টেস্ট করে তাদের শরীরেও ভাইরাস পাওয়া যায়।
এলিজাবেথের ক্ষেত্রে লক্ষণ ছিল অন্যদের থেকে আলাদা। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে তার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে। কারণ তার কোন কাশি বা শ্বাসকষ্ট ছিলই না। শুধু জ্বরে ভুগছিলেন।
এলিজাবেথ জানান, ‘আমার কোনো কাশি ছিল না। শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনো সমস্যা ছিল না। বুকে কোনো সমস্যা অনুভব করিনি। এ জন্য আমি মনে করেছিলাম আমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।’ পরে তিনি হাস্পাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসায় সুস্থতা ফিরে পান।
কেস স্টাডি ৪
৬৭ বছর বয়সী কার্ল গোল্ডম্যান ছিলেন ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ শিপের যাত্রীদের একজন। প্রথম দিকে তিনি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হন। সাথে বেশ শ্বাসকষ্টও ছিল। এর পর যুক্ত হয় শুকনো কাশি। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন ধরনের রোগ। ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নয়। আমার নাক বন্ধ হয়নি, গলাব্যথা হয়নি। মাথাব্যথাও ছিল না।’ পরে তিনি হাস্পাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
কেস স্টাডি ৫
পঞ্চম ব্যাক্তি স্কটল্যান্ডের একজন পুরুষ নাগরিক। উনার বয়স ৫০। বিশেষ অনুরোধে উনার পরিচয় প্রকাশ করেনি বিজনেস ইনসাইডার। তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে জানান যে ইতালি থেকে ফেরার ১০ দিন পর তার শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তিনি জানান, প্রথমে তার সেরকম কোন লক্ষণ ছিল না। কোন রকম অসুস্থতা না থাকায় তিনি দুই দিন অফিসও করেন। দ্বিতীয় দিন তার জ্বর আসে। প্রচন্ড শীত লাগতে থাকে এবং তাতে তিনি কাঁপতে থাকেন। এসময় শরীরে বেশ ব্যাথা হতে থাকে। বিশেষ করে পায়ে। পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট ও শুকনো কাশীও শুরু হয়। এর পর টেস্টে করোনা ভাইরাস টেস্টে পজিটিভ আসে এবং তাকে হাস্পাতালের ভর্তি করা হয়। অবশেষে বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থতা ফিরে পান।