সানা ইরশাদ মাট্টু |
ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেয়াা হয়েছিল - গত ৫ই অগাস্ট তা বাতিল করে দেয় সেদেশের সরকার। পুরো অঞ্চলটিকে দুভাগে ভাগ করে তাকে দুটি কেন্দ্র-শাসিত ভূখণ্ডে পরিণত করা হয়। আরোপ করা হয় কঠোর কারফিউ, বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, আটক করা হয় হাজার হাজার লোককে।
এ বছর মার্চ মাস থেকে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছিল। কিন্তু সে সময়ই বাকি বিশ্বের মতো ভারতের কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেবার পর সেই লকডাউন আবার ফিরে আসে।
ফলে গত এক বছর সময়কাল কাশ্মীরের মানুষের জন্য ছিল আবদ্ধ জীবন, ক্রোধ আর আতঙ্কের এক বছর।
কিভাবে তারা পার করেছেন এ সময়টা - তা তাদেরই মুখ থেকে শুনতে বিবিসি কথা বলেছে ১২ জন কাশ্মীরীর সাথে।
সানা ইরশাদ মাট্টু, ২৬
গত চার বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন সানা ইরশাদ মাট্টু।
"আমাদের এ লাইনে ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবনের মধ্যে কোন ফারাক নেই" - বলছিলেন মিজ মাট্টু, "আমরা আগেও লকডাউনের জীবন পার করেছি। কিন্তু গত এক বছর সময়টা জুড়েই আমাদের মনে জেঁকে বসেছিল ছিল একটা ভয়ের অনুভূতি।"
"আমরা জানতাম না কি হচ্ছে। আমাদের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে গেল। নিজের মনের কথা অন্যদের জানাতে আমাদের নানা কৌশল বের করতে হয়েছিল।"
মিজ মাট্টু বলছিলেন, রিপোর্টারদের ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনীর বৈরী মনোভাব আগে থেকেই ছিল। কিন্তু আগস্ট মাসের পর থেকে তা অনেক বেশি কঠোর হয়ে ওঠে।
"এখন সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের খবরের সূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমি যদি সামাজিক মাধ্যমে কিছু লিখতে যাই তার আগে আমাকে দু-তিনবার ভাবতে হয় যে আমাকে তো একটা না একটা কাজ করতে হবে।েএই ভয়টা সব সময়ই মনের মধ্যে কাজ করছে।"
আলতাফ হুসেইন, ৫৫
আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পরের পরিস্থিতিতে যারা প্রথম প্রাণ হারিয়েছিলেন - তাদের অন্যতম হচ্ছেন আলতাফ হুেসেইনের ছেলে।
১৭ বছরের তরুণ উসাইব আলতাফ নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে পালানোর সময় নদীতে ঝাঁপ দিলে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে তাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করে।
এক বছর পরও তার মৃত্যু সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় নি। যে হাসপাতলে উসাইব মারা গিয়েছিল - সেই হাসপাতালও তার পরিবারকে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করেছে।
সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ফুটবল খেলতে, ফিরে এলো কফিনে, লাশ হয়ে। পুলিশ বলে সেদিন কেউ মারা যায় নি। উসাইব যে নিহত হয়েছে তা পুলিশ স্বীকারই করে না। আমার হাতে সাক্ষী আছে কিন্তু তারা এখনো মামলা নিতে অস্বীকার করে চলেছে। আমরা থানায় গিয়েছি, আদালতে গিয়েছি - কিন্তু বিচার পাইনি।"
মুনিফা নাজির, ৬
নিরাপত্তা বাহিনী আর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গিয়েছিল মুনিফা।
সে সময় তার ডান চোখে কিছু একটা এসে লাগে - সম্ভবত গুলতি দিয়ে ছোঁড়া পাথর।
"আমি অনেকদিন হাসপাতালে ছিলাম, তবে আমার সেসময়ের কথা খুব বেশি মনে নেই। আমি আমার স্কুলের পড়া ভুলে গেছি। আমি ১০০-র মধ্যে ১০০ পেতাম। চোখ ভালো হয়ে গেলে আমি একজন ডাক্তার হতে চাই। আমি ডাক্তারদের পছন্দ করি কারণ তারা আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে্।"
মুনিফার বাবা স্থানীয় একটি বার্তা সংস্থার ক্যামেরাম্যান। তিনি বলছেন, তার মেয়ের ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
মুনিফাকে তিনি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন, কারণ এখন তার স্কুলের বেতন দেবার সঙ্গতি নেই।
"আমি শুধু ছায়া দেখতে পাই। আমি বই পড়তে পারি না, আমি কোথাও যাই না। ডাক্তাররা বলেছিল আমি ১৫ দিন পরই স্কুলে যেতে পারবো, কিন্তু এখন এক বছর পেরিযে গেছে।" বলছিল মুনিফা।
ফারুক আহমেদ, ৩৪
ফারুক আহমেদের জীবন ছেঁড়া কাঁথা থেকে ধনী হয়ে ওঠার গল্পের মতোই।
খুব অল্প বয়স থেকেই তাকে জীবিকার সন্ধানে নামতে হয়েছিল। তখন তিনি কাজ শুরু করেছিলেন ভারতশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের এক বাস ডিপোতে হেলপার হিসেবে।
পরে ২০০৩ সালে তার স্ত্রীর সোনার গহনা আর তার নিজের সঞ্চয় মিলিয়ে তিনি নিজেই একটি বাস কেনেন।
এখন তিনি ব্যবসায় অংশীদার নিয়েছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তিনি এখন সাতটি বাসের মালিক।
কিন্তু সমস্যা হলো - মি. আহমেদের সবগুলো বাসই এখন বসে আছে। কারণ এ বছর এই কাশ্মীরের লকডাউনে যেসব খাতে চরম আঘাত লেগেছে তার মধ্যে পরিবহন অন্যতম।
"কিচুদিন আগেই আমরা সবগুলো বাসের ইনস্যুরেন্স পলিসিগুলো নবায়ন করেছি চার লাখ রুপি খরচ করে। কিন্তু আয় করতে পারিনি একটি পয়সাও। আমার সাতজন কর্মচারী, তারা প্রায় না খেয়ে আছে। কিন্তু আমার নিজের পরিবারই যখন বিপর্যস্ত - তখন অন্যের পরিবারকে আমি কিভাবে সাহায্য করবো? আমার মতো লোকেরা একটা সম্মানজনক জীবিকার জন্য আমাদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করেছি। আমরা যদি উপার্জন না করি তাহলে দেনা শোধ করবো কিভাবে?"
ঋণ শোধ করার জন্য মি. আহমেদকে এখন দিনমজুরের মত কাজ করতে হচ্ছে।
ইকরা আহমেদ, ২৮
ইকরা আহমেদের নিজের ফ্যাশন ডিজাইনিংএর ব্যবসা আছে। তিনি বলছেন, তিনি এই কেরিয়ার বেছে নিয়েছেন কারণ তিনি চাননি যে তার ওপর অন্য কেউ ছড়ি ঘোরাক।
ইকরা বলছেন, তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে কাশ্মীরী সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে চান। তার পোশাক সবই বিক্রি হয় অনলাইনে।
"এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়াটা আমার ব্যবসার ওপর এক বিরাট আঘাত হেনেছে। টুজি ইন্টারনেট আমার জন্য সহায়ক নয়। আমার ক্রেতা আছে সারা দুনিয়াজুড়ে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া আর দুবাইতে।"
"কিন্তু আমার বেশিরভাগ ক্রেতাই কাশ্মীরী এবং তারা টুজি ইন্টারনেটের কারণে আমার পণ্যগুলোর ছবি দেখতে পাচ্ছে না। আগে আমি প্রতি সপ্তাহে ১০০-১১০টা অর্ডার পেতাম, কিন্তু এখন আমি পাচ্ছি মাত্র পাঁচ কি ছ'টা।"
আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দেরিতে পণ্য সরবরাহ হলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিচুদিন আগে ইকরার সাথে যোগাযোগ করেন একজন ক্রেতা এবং তাকে অভিনন্দন জানান - কারণ তার কাছে অর্ডারের পণ্যটি এসে পৌঁছেছে ৬ মাস পর। আরেকজনকে তিনি সময়মত টেক্সট মেসেজের জবাব দিতে পারেন নি ইন্টারনেট বন্ধ থাকার জন্য -ফলে তাকে আরেকটি মেসেজ পাঠিয়ে তিরস্কার করেন ওই ক্রেতা।
ইকরা বলছেন, তার মনে হচ্ছেনা যে এভাবে তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
"প্রতিমাসে আমার খরচ হয় দুই লাখ রুপি। আমি যদি কোন উপার্জন না করি তাহলে কীভাবে আমি আমার সাতজন কর্মচারীকে বেতন দেবো?" বলেন তিনি।
বদরুদ দুজা, ২৪
বদরুদ দুজা একজন আইনের ছাত্র। কিন্তু এখন তারই বেছে নেয়া এ পেশা সম্পর্কে মোহ কেটে যাচ্ছে তার।
"একজন আইনের ছাত্র হিসেবে আমি ভারতের সংবিধান, গণতন্ত্রের চেতনা, মৌলিক অধিকার, এবং যখাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করি। কিন্তু এগুলো এখন কিছু শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা যে দুর্গ গড়ে তুলেছিল তা এখন ভেঙে পড়ছে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত স্বাথীনতাগুলো হারাচ্ছি। ছাত্র-শিক্ষক সবার জন্যই আইন পড়াটা এখন একটা পরিহাসে পরিণত হয়েছে।"
"আগে কথা বলাটা ছিল একটা উপশমের মতো । কিন্তু এখন এ কারণে আপনার জেল হয়ে যেতে পারে। আমি কাশ্মীরের একটি মানবাধিকার সংক্রান্ত এ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করি। আমি দেখেছি মিডিয়ার সাথে কথা বলার অপরাধে একজন লোককে ধরে নিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছে।"
"আমাদের চেতনা ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত নিরাশা। যারা আইন রক্ষা করার জন্য বেতন নিচ্ছে তারাই এটা লংঘন করছে এটা দেখার জন্য আমরা আইন পড়ছিলাম না। এখন আমি অন্য কোন একটা কাজের সন্ধানে আছি।"
মঞ্জুর ভাট, ২৯
কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে যে দল সেই ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির মিডিয়া উইংএর প্রধান হচ্ছেন মঞ্জুর ভাট।
তিনি এই দলে যোগ দিয়েছেন বলে তার পরিবার ও বন্ধুরা তাকে পরিত্যাগ করেছে।
কিন্তু মি. বাট বলছেন, বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে তিনি জাহান্নামে যাবেন না। তিনি বরং মনে করেন - তিনি এটা করে এ অঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করছেন।
তার কথা - "আমার লক্ষ্য ক্ষমতা বা টাকা কামানো নয় বরং অন্যের জীবনে পরিবর্তন আনা। আমাদের তরুণরা হাতে বন্দুক তুরে নিচ্ছে, কিন্তু এটা কোন সমাধান নয়। কাশ্মীরে যারা মারা যাচ্ছে তারা আমারও ভাই কিন্তু সহিংসতা এর জবাব হতে পারে না।"
জাভেদ আহমদ, ৩৫
গত ২৫ বছর ধরে শ্রীনগরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ডাল লেকে নৌকা চালাতেন জাভেদ আহমদ। পর্যটকদের ডাল লেকের এপার-ওপার ঘোরানোই ছিল তার পেশা, এবং এতে ভালোই রোজগার হতো তার।
প্রতিদিন মোটামুটি ৫০০ রুপি আয় হতো তার।
"আর এখন আমাকে সবজি বিক্রি করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে, কিন্তু লকডাউনের মধ্যে সজির ক্রেতাই বা কোথায়?"
জাভেদ আহমদ বলছিলেন, এখন তাকে ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
"আমাদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা এখানে আসছে না কারণ তারা আতংকিত। কাশ্মীরের সবার জন্যই এখন এক কঠিন সময় যাচ্ছে। কিন্তু সবচাইতে বেশি দুরবস্থায় পড়েছে পর্যটন খাত।"
মি. আহমদ বলছেন সরকার প্রতি নৌকাচালককে ১০০০ রুপি করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু এ টাকা দিয়ে তার বিদ্যুতের বিলও হবে না।
"আমার সব আশা শেষ হয়ে গেছে । এখন আমি আল্লাহর হাতে সব ছেড়ে দিয়েছি।"
ফালাহ শাহ, ১২
ফালাহ শাহ একজন স্কুল ছাত্রী। তিনি বলছেন, কাশ্মীরে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন।
"ভারতের অন্যত্র শিক্ষার্থীরা সেরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আর আমি এমন একটা স্তরে আছি যেখানে আমি প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা যদি এ সময় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা না পাই তাহলে ভবিষ্যতে কিভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলো পাস করবো?"
"আমি বিজ্ঞান আর গণিতের মূল ধারণাগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়ছি। কিন্তু ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকায় আমি সমাধানগুলো সন্ধান করতে পারছি না। এখন ইন্টারনেট ফিরে এলেও তার গতি খুবই ধীর। এখন একটা বই খুলে পড়াটাও অর্থহীন হয়ে পড়েছে কারণ আমার বিষয়গুলো নিয়ে ধারণাটাই তৈরি হয় নি।"
ফালাহ বলছেন, তিনি তার স্কুল, শিক্ষক এবং বন্ধুদের অভাব বোধ করছেন।
"আামি বাড়ির বাইরে যাই না। এক বছর ধরে আমি এখানে বন্দী হয়ে আছি। অন্য কোন রাজ্যে যদি এক বছর ধরে লকডাউন থাকতো, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা বাইরে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ করতো। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করতেও পারছি না কারণ তাতে আমাদের জেলে যেতে হতে পারে।"
সাজিদ ফারুক, ৪৩
সাজিদ ফারুক একজন হোটেল মালিক। তিন প্রজন্মের ব্যবসায়ী পরিবার তাদের। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, কাশ্মীরে তিনি আর কোন ভবিষ্যৎ দেখছেন না।
তিনি বলছিলেন ১৯৯০ থেকে তিনি এই রাজ্যে যে মৃত্যু আর সহিংসতা দেখে আসছেন - তার কথা। সে সময় এ রাজ্যে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে এক জঙ্গী অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল।
"এই হোটেলটা গড়ে তুলতে তিন প্রজন্ম লেগেছে। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে আমরা আসলে কোন মতে টিকে আছি।"
তিনি বলছেন, এখানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
"আমার হোটেল চালু থাকুক বা না থাকুক আমাকে ২ লাখ রুপি বিদ্যুতের জন্য দিতে হয়। এর ওপরে অন্যান্য সার্ভিসের চার্জ আছে। আমি তো দেখতে পাচ্ছি না যে কীভাবে অবস্থার উন্নতি হবে।"
"যখন কাশ্মীরিরা শোক পালন করে, তখন বাকি দেশ উল্লাস করে। যা বাকি দেশ উদযাপন করে, আমরা তা তা নিযে শোক করি। কাজেই সবকিছুই এখন রাজনৈতিক হয়ে গেছে। সবকিছুর মধ্যেই সংঘাত। এরকম পরিস্থিতিতে কি ব্যবসা চলতে পারে?"
বিলাল আহমদ, ৩৫
বিলাল আহমদ হচ্ছেন কাশ্মীরের একজন ফল চাষী। এ অঞ্চলের কৃষি থেকে আয়ের একটা বড় উৎস হচ্ছে এই ফল চাষ।
তিনি বলছেন, সম্প্রতি আবহাওয়া আর লকডাউন মিলে তিনি এখন এমন এক অবস্থায় পড়েছেন যখন তাকে হয়তো চাষের জমিটাও বিক্রি করে দিতে হতে পারে।
এবার আগেভাগেই বরফ পড়ার কারণে তার আপেল আর পীচের গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি তার ফসলের পরিচর্যা করতে পারেন নি, ফলে ফলন হয়েছে কম।
"আমরা এক বছর ধরে অলস বসে আছি। আপেল থেকে আমার আগে এক থেকে দেড় লাখ রুপি আয় হতো, কিন্তু এবার আমি মাত্র ৩০ হাজার টাকা আয় করেছি। আমার ভাই ১২০০ বাক্স পীচ উৎপাদন করেছে কিন্তু এর বেশির ভাগটাই তাকে ফেলে দিতে হয়েছে - কারণ কোন ক্রেতা নেই।"
"এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আমার হযতো জমিটাই বিক্রি করে দিতে হবে। আমি তেমন লেখাপড়া করিনি তাই আমার অন্য কোন কাজ করারও উপায় নেই।"
মোহাম্মদ সিদিক, ৪৯
মোহাম্মদ সাদিক মৃৎশিল্পের কাজ করেন। কিন্তু তিনি বলছেন কাঁচামালের অভাবের কারণে তার কাজ এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি স্থানীয় লোক নয় এমন ঠিকাদারদের বালু আর পাথর উত্তোলনের পারমিট দিয়েছে। তার ফলে মি. সিদিকের মতো স্থানীয়রা বেকার হয়ে পড়েছেন।
"সরকার মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছে, কারণ হিসেবে তারা বলছে আদালতের আদেশ হয়েছে। কিন্তু আদালত এতদিন কি করছিল? বিচারপতিরা কি আমাদের মত গরিব লোকদের পরিবারের কথা ভেবেছিলেন?তারা কি আমাদের না খাইয়ে মারতে চায়?"
"লকডাউনের কারণে আমার পণ্য সব অবিক্রীত পড়ে আছে। আমি নতুন পণ্য বানানো বন্ধ করে দিয়েছি। তার পরিবর্তে আমি এখন কাজ করছি দিনমজুর হিসেবে।"
সূত্র-বিবিসি বাংলা