বৈবাহিক ধর্ষণ: ইসলাম কি বলে? স্বামী কি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করতে পারে?



আমাদেরবৈবাহিক ধর্ষণ: ইসলাম কি বলে? স্বামী কি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করতে পারে? সমাজে বেশ কিছুদিন ধরে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’  নামে একটা ‘টার্ম’ বা পরিভাষা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইসলামী শরিয়তে এ ধরেনের কোনো পরিভাষা আছে কিনা এবং এ সম্পর্কে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গী কি সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

ইসলাম একজন নারীর সাথে একজন পুরুষের বৈধ সম্পর্ক তথা বিবাহের মাধ্যমে পারস্পরিক জৈবিক চাহিদা মেটানোর অনুমোদন দিয়েছে, সৃযোগ দিয়েছে, জায়েজ করেছে। এক্ষেত্রে একে অন্যকে সাহায্য করা, একে অন্যের ডাকে সাড়া দেওয়া, একে অন্যের প্রয়োজন পূরণ করার বিষয়টিকে ইসলাম আবশ্যক করেছে। তাদের চরিত্রকে সংরক্ষণ করার স্বার্থে, সমাজের সাধারণ বিকাশের স্বার্থে জীবনসঙ্গীর জৈবিক চাহিদা পূরণকে স্বামীর জন্য আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি না করেন, অবহেলা করেন, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন। ঠিক তেমনিভাবে পুরুষের জৈবিক চাহিদা বা স্বামীর জৈবিক চাহিদা মেটাবার ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি অবহেলা করে, তিনিও অপরাধী হবেন। কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া স্বামীর ডাকে তিনি সাড়া না দিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা’র দৃষ্টিতে তিনি অপরাধী হবেন। এটা হলো সাধারণ অবস্থার কথা। এর বাইরে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখা অবশ্যই তাদের জন্য জরুরী এবং আবশ্যক। যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি অবিচার করে, জুলুম করে, তিনি পারছেন না তারপরও তার উপর চাপিয়ে দেন। একইভাবে স্ত্রী যদি স্বামীর উপর জুলুম করেন, তাহলে সেটাকে ইসলাম সম্পূর্ণরুপে হারাম করেছে। ইসলাম সকলের প্রতি জুলুমকে হারাম করেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজের প্রতি নিজের জুলুমকে হারাম করেছেন সেখানে স্বামীকে স্ত্রীর উপর জুলুম করার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং পৃথিবীর অন্য সবার সাথে জুলুম করাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেমন হারাম করেছেন, তেমনিভাবে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের উপর জুলুম করাকেও হারাম করেছেন। যদি এই বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, একে অন্যের উপর জুলুম করছেন, তার কষ্ট হচ্ছে তারপরও সেটাকে উপেক্ষা করে তিনি তার প্রতি জুলুম করছেন, তাহলে সন্দেহাতীতভাবে ইসলাম সেটাকে হারাম করেছে। কারন, জুলুমকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জায়েজ করেননি।

কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা অনেকটা আবদারের সম্পর্ক। এখানে আবদারের জায়গা থেকে, বোঝাবুঝির জায়গা থেকে কিছুটা মৃদু জোরাজুরি হতে পারে। সেটা উভয় পক্ষ থেকেই হতে পারে। সেটাকে তারা কিন্তু নিজেদের মধ্যকার যে অধিকার আছে, আবদার আছে, সেই হিসেবে দেখে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, কিছু ভিন্ন ধরনের ঘটনা বাদ দিয়ে। এগুলোকে যদি আপনি ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ বলে সমাজে পরিচিত করেন, প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন, তাহলে কিন্তু দাম্পত্য জীবনের যে সম্পর্ক সেটা এমনিতেই ঠুনকো হয়ে গেছে সেটা আরও ঠুনকো হয়ে যাবে। এমনিতেই পরিবারগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে এবং কোনোভাবেই টেকসই হচ্ছে না সেখানে যদি স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে আপনি উসকে দেন তাহলে কিন্তু সম্পর্কগুলো আরও বেশি ঠুনকো হয়ে যাবে।

মনে রাখা উচিৎ, স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের উপর আবদর চলে, মৃদু জোরাজুরি চলে, জুলুমের পর্যায়ে না চলে যায়, তাহলে সেটাকে খুব খারাপভাবে দেখাবার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখি অনেক সময় স্ত্রী স্বামীকে অনেকটা জোর করে মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বা কোনো কিছু কিনতে জোরাজুরি করছেন এবং সেটাকে তারা পরস্পরের প্রতি অধিকার বা আবদারের জায়গা থেকে করছেন -এটাকে কেউ কিন্তু বৈবাহিক ডাকাতি বলে অভিহিত করেন না। স্ত্রী যদি স্বামীকে কিছু কিনতে বাধ্য করে, স্বামী কিনতে চাচ্ছেন না তারপরও জোরাজুরির কারনে বাধ্য হয়ে কিনছেন, সেটাকে কিন্তু ডাকাতি বলা হয় না। স্বামীর কাছ থেকে টাকা চাইলে দিলেন না, একটু জোর করেই নিলেন -এই জোর করাকে কিন্তু বৈবাহিক ডাকাতি বলা হয় না।

তাহলে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সেক্সুয়াল সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে টার্ম আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই টার্মগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক বেশি দায়িত্বশীর ভূমিকা রাখা উচিৎ। এই টার্মগুলোর মাধ্যমে আমরা স্বামী-স্ত্রীকে একে অন্যের প্রতি উসকে দিচ্ছি কিনা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে নষ্ট করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে কিনা -এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

আমরা আবারও বলছি ইসলাম জুলুমকে হারাম করেছে। জৈবিক চাহিদা পূরণের নাম করে স্বামী যদি স্ত্রীর কোনো ওজর, সমস্যা বা অসুস্থতাকে একদম পাত্তা না দেন এবং তার প্রতি জুলুম করেন, তাহলে ইসলাম সেটাকে কোনোভাবেই অনুমতি দেয়নি। বিধায় নতুনকরে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নামের এ সমস্ত টার্মের প্রচলন অথবা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা আমাদের সমাজে করা হচ্ছে সেগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন, হেফাজতে রাখুন এবং আমাদের দাম্পত্য জীবনকে মধুময় এবং সুখময় করে তুলুন। আমিন!

– শায়খ আহমাদুল্লাহ

Post a Comment

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال