আচ্ছা, আপনাদের কি মনে আছে, আলিফ লাইলার সেই অদ্ভুত অবিশ্বাস্য কালো জাদুগুলোর কথা, অথবা এভিল ডেডের (Evil Dead) এর সেই কালো জাদুর বইটির কথা? যেখানে অদ্ভুত সব কালো জাদুর মন্ত্র ছিলো আর সেগুলো পাঠ করা মাত্রই শয়তান জাগ্রত হয়ে উঠতো। ছোটো বেলাতে টিভিতে এসব দেখে জাদু সম্পর্কে কতকিছুই না ভেবেছি আমরা। কিন্তু কালো জাদু কি সেটা তখন বুঝতাম না। আসলেই তো, কালোজাদু কি? কালো জাদু বা Black Magic এমন একধরণের নেগেটিভ এনার্জি (Negative Energy) বা শয়তানি বিদ্যা যা প্রয়োগ করে কারো ক্ষতি বা উপকার করা যায়। কিন্তু সাধারণত মানুষ এগুলো দিয়ে ক্ষতিই করে থাকে। কথিত আছে, "নেক্রোনমিকন (Necronomicon)" নামে এরকমই ভয়ঙ্কর কালো জাদুর বই আজ থেকে হাজার বছর আগে একটা সত্যিই লেখা হয়েছিলো। যে বইতে লেখা ছিলো শয়তানি দুনিয়ার সমস্ত কালো জাদুর মন্ত্র। এটি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় বই হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু সেই বইটি আজ কোথায় আছে, আর কিই বা লেখা ছিলো সেই বইতে তা কেওই আজ বলতে পারে না। কিন্তু ধারণা করা হয়, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও এই বইটি আজও আছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, বিখ্যাত মার্কিন লেখক এইচ.পি. লাভক্র্যাফট এই "নেক্রোনমিকন (Necronomicon)" নামের বইটিকে নিয়ে বিস্তর লেখালিখি করেন। তিনি তার অসংখ্য গল্পে এই গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেন। এটা সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তাতে ধরণা করা হয় যে, এই বইটি আরবি ভাষায় লেখা হয়েছিলো। পরে এর গ্রিক অনুবাদ ইউরোপের রহস্যবাদী কাল্টগুলোর হাতে পৌছায়। মনে করা হয়, আবু আলি আল হাসান নামের এক জনৈক আরব ব্যক্তি এই "নেক্রোনমিকন (Necronomicon)" গ্রন্থের রচয়িতা। দামাস্কাসে তাকে "আরব আবদুল" নামে ডাকা হতো। ইউরোপে তিনি "দ্য ম্যাড অ্যারাব - The Mad Arab" নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার আসল পরিচয় এখনও পর্যন্ত কেউই জানতে পারেনি। তবে অনুমান করা হয় যে, ৮২৭ সালেও তিনি জীবিত ছিলেন। "ইরাম" নামের এক গুপ্ত শহরে তিনি ১০ বছর যাবত তিনি গুপ্তবিদ্যার শিক্ষা করেন এবং সেবিষয়ে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি "আজিফ" ছদ্মনাম নিয়ে তিনি এই বইটি লিখেছিলেন। তবে তিনি এই বইতে যে কি লিখেছিলেন তা আজও কারো কাছে পরিষ্কার নয়। এইচ পি লাভক্র্যাফট সহ আরও অনেক সাহিত্যিক লেখকের ধারণা, এই বই কালো জাদুবিদ্যার এক খনি। এটাতে অসংখ্য বীভৎস, ভয়ানক আর অদ্ভুত সব কালো জাদুর উপায় উল্লেখ আছে। এই বইতে, পিশাচ জাগরণের পদ্ধতি ও উপায় থেকে শুরু করে মৃত কোনোকিছুকে জীবিত করার পদ্ধতিও উল্লেখ আছে। বলা হয়ে থাকে যে, যদি কোনো ব্যক্তি এই বইটি পড়ে ফেলতে পারেন তবে এই মহাবিশ্বের সব শয়তানি বিদ্যা ও রহস্য তার হাতে চলে আসবে আর সে এই পৃথিবী শাসন করার মতো ক্ষমতা ও সাহস তার মধ্যে চলে আসবে। ইউরোপে মধ্যযুগে যখন ডাকিনীবিদ্যার চর্চা তুঙ্গে উঠে গেছিলো ঠিক তখনি অসংখ্য মানুষের মধ্যে এই নেক্রোনমিকন নিয়ে পাগলামি ব্যাপক ভাবে দেখা দিয়েছিলো, অসংখ্য মানুষ এই বইটির সন্ধান করতে থাকে তখন। আর তখন সুযোগ বুঝে বেশ কিছু নকল বজরা "নেক্রোনমিকন" নাম দিয়ে কিছু কল্পিত নকল বই বাজারে বের করে। এরকম অসংখ্য "নকল নেক্রোনমিকন" বইয়ে ইউরোপের গুপ্ত বইয়ের বাজার ভরে ওঠে। এরপর লাভক্র্যাফট ১৯২৭ সালে "নেক্রোনমিকন" কে নিয়ে একটি কল্পিত ইতিহাস লেখেন এবং ১৯৩৮ সালে তা প্রকাশিত হয়। এবং এর ফলে পাশ্চাত্যে এটা নিয়ে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় মাঝে মাঝেই এই বইটির কিছু তথাকথিত নকল খন্ডাংশ এবং বিভিন্ন রকম কল্পিত কথা প্রকাশিত হতে শুরু করে। এবং এটা নিয়ে অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতোটাই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো যে, রাশিয়ার কুখ্যাত জাদুকর রাসপুটিন, নাৎসি নেতা হিমলার এবং এমনকি স্বয়ং হিটলারও নাকি এই বইয়ের একটি করে কপি তারা তাদের হস্তগত করেছিলেন। তবে লাভক্র্যাফটের ধারণা এই যে, এই বইটিকে পুরোপুরি কেওই কোনোদিন স্বচক্ষে দেখেনি। তবে অনেকেই মনে করে থাকেন, তার বইগুলো আরও বেশি করে বিক্রি হয় সেজন্য এটা তার একটা চাল ছিলো। কিন্তু এতোকিছুর পরেও অনেকেরই বিশ্বাস, এই বইটা কোথাও না কোথাও আছে। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও এই "নেক্রোনমিকন" রয়েছে। হতে পারে সেটা কোনো পুরাতন লাইব্রেরীর তাকে অথবা কোনো গির্জা বা মন্দিরের ভূগর্ভস্থ স্ক্রিপ্টে অথবা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সংগ্রহের গোপন স্থানে লুকিয়ে এই বিষাক্ত শয়তানি মহাগ্রন্থটি আজও তার বিষাক্ত নিশ্বাস নিচ্ছে। হয়তো যে ব্যক্তি এই বইটিকে পুরোপুরি পড়ে ফেলতে পারবে তার হাতে সত্যিই হয়তো সব শয়তানি ক্ষমতা চলে আসবে।