১।  আমাদের মানব মস্তিষ্কের মোট ওজন তিন পাউন্ডের মতো।  তুলনা করলে দেখা যায়, এটি আমাদের শরীরের মোট ওজনের দুই ভাগ।  আমাদের সারাদিনে গ্রহণ করা খাবারের ২০ শতাংশ আমাদের মস্তিষ্কে খরচ হয়। 

২।  আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিদিন জাগ্রত অবস্থায় ১২ থেকে ২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যা একটি LED বাল্ব জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট। 

৩।  মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের সবথেকে চর্বিযুক্ত অংশ।  আমরা কোলেস্টেরল ছাড়া খাবার খুঁজি সবসময়, কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, আমাদের শরীরের সঞ্চিত মোট কোলেস্টেরলের ২৫ ভাগই থাকে আমাদের মস্তিষ্কের কোষে।  আর এই এই কোলেস্টেরল আমাদের জন্য এতোটাই যে, এগুলো ছাড়া মস্তিষ্কের নিউরন বা স্নায়ুকোষগুলো মারা যাবে। 

৪।  আমাদের মস্তিষ্কে যখন পানি শুণ্যতা দেখা দেয় তখন তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে আমাদের মস্তিষ্কে।  কারণ মস্তিষ্কে পানির পরিমাণ কমে গেলে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারি না।  মাত্র দুই শতাংশ পরিমাণ কমে গেলেই আমাদের মস্তিষ্কের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতায় বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৫।  একটি গমের দানার সমান মস্তিষ্ক টিস্যুতে প্রায় ১ লক্ষ নিউরন থাকে, যেগুলো পরস্পরের সাথে প্রায় ১ বিলিয়ন বন্ধন তৈরি করে।  তাহলে মোট নিউরনের সংখ্যা কত তার সঠিক ও নিখুত হিসাব এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।  তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মোট নিউরনের সংখ্যা ৮৬ বিলিয়নের কম না।  কিন্তু এদের সবগুলো আবার একরকম নয়, প্রায় ১০,০০০ ভিন্ন ভিন্ন রকম নিউরন রয়েছে।  আর এই নিউরনে তথ্য চলাচলের সর্বনিম্ন গতিবেগ হলো ২৫৮.৪৯০ মাইল/ঘন্টা। 
Photo by John Hain from Pixabay
৬।  আমাদের মস্তিষ্কে ৫ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের নিউরন গুলো মারা যাওয়া শুরু করে।  আর নিউরন মারা যাওয়ার পর তার জায়গায় আর নতুন করে কোনো নিউরন তৈরি হয় না।  আর ধুমপান করার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিকল হয়ে যায় অর্থাৎ মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়ার জন্য ধুমপানই হলো মূল দায়ী। 

৭।  ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার নামে আমাদের মস্তিষ্কে একটি পর্দা আছে যার কাজ হলো আমাদের মস্তিষ্ককে সুরক্ষা প্রদান করা।  আমাদের রক্ত থেকে মস্তিষ্কে কি যাবে তা এই পর্দা নিয়ন্ত্রণ করে।  ক্ষতিকর পদার্থ এই পর্দা ভেদ করে সাধারণ যেতে পারে না, তবে নিকোটিন ও অ্যালকোহল কে এই পর্দা বাঁধা দিতে পারে না।

৮।  আমাদের মস্তিষ্ক দুই বছরেই আশি ভাগ পূর্ণতা পায় আর সম্পূর্ণ পূর্ণতা পেতে পঁচিশ বছর লেগে যায়। 

৯।  আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ মাইল লম্বা শিরা রয়েছে।

১০।  মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে হাতির মস্তিষ্ক বড় হলেও তুলনামূলক ভাবে মানুষের মস্তিষ্কই সবচেয়ে বড়।  কারণ হাতির মস্তিষ্ক তার দেহের ওজনের মাত্র ০.২৫ ভাগ যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক তার দেহের ওজনের ২ ভাগ।  তাই বলাই বাহুল্য, জীবজগতে মানুষের মস্তিষ্কই সবচেয়ে বড়।

১১।  আমাদের মস্তিষ্কের আবরন বা চামড়ার ওজন আমাদের মস্তিষ্কের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ।

১২।  অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় ৩ গুণ বড়।

১৩।  আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ ভাগই হলো পানি।

১৪।  মানুষ যখন জ্বরে আক্রান্ত হয় তখন তার মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ তাপ ধারণ ক্ষমতা থাকে ১১৫.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট আর ততক্ষণ পর্যন্তই মানুষ বাঁচতে পারে।
১৫।  আমাদের মস্তিষ্ক থেকে অক্সিটোক্সিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয় যেটা আমাদের ভালোবাসা এবং আত্মসংবরণের জন্য দায়ী।

১৬।  আমাদের মধ্যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক প্রতিদিন ৭০০০০ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে সক্ষম। 

১৭।  আমাদের মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে ১০১৫ টি হিসাব করার ক্ষমতা আছে।

১৮।  ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ার মতে, মানুষের মস্তিষ্ক একইসাথে অনেক রকম তথ্য প্রায় পাঁচ বার মনে রাখতে পারে।  মানুষের মস্তিষ্কের সঠিক ধারণক্ষমতা আজও বিজ্ঞানীরা সঠিক ভাবে বের করতে সক্ষম হন নি।  মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার কাছে একটা সুপার কম্পিউটারও কিছুই না।  বিজ্ঞানীদের মতে, আপনি আপনার মস্তিষ্কের মেমরি কার্ড কখনই Full করতে পারবেন না।  তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ৩ টেরাবাইট থেকে ১০০০ টেরাবাইট পর্যন্ত হতে পারে।  ব্রিটেনের জাতীয় আর্কাইভসে গত ৯০০ বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে, যার সম্পূর্ণ টা আপনার মস্তিষ্কে রাখতে চাইলে ৭০ টেরাবাইট জায়গা নেবে।  যদি আপনি মস্তিষ্কে একটানা ভিডিও ধারণ করতে থাকেন তবুও আপনার ৩০ লক্ষ ঘন্টা বা ৩৪২ বছর সময় লেগে যাবে মস্তিষ্কের মেমরি full হতে।  যা আমাদের পক্ষে কখনই সম্ভব না।

 ১৯।  মানুষের মস্তিষ্ক যদি ৮-১০ সেকেন্ড রক্ত না পায় তবে মানুষ জ্ঞান হারায়, আর মস্তিষ্ক অক্সিজেন ছাড়া মাত্র ৫ মিনিট টিকে থাকতে পারে।  ৫-১০ মিনিট অক্সিজেন না থাকলে মস্তিষ্কে স্থায়ী সমস্যা দেখা দেয়।

২০।  মানুষের মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলোর মৃত্যু হয়। 

এছাড়া আরও অনেক অনেক মজাদার তথ্য আছে আর দিন দিন সেই তথ্যের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।  বুঝতেই পারছেন, আমাদের মস্তিষ্কের পাওয়ার কতোটা।  তাহলে চলুন, আবার ব্রেইন নামক এই সুপার কম্পিউটারকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও উন্নত করে তুলি।