No title

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আমাদের আজকের আয়োজন মহাগ্রন্থ কুরআন আল–কারীম থেকে নেয়া কিছু অমিয় উপদেশবাণী। এই উপদেশবাণীগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আসুন, আমরা আমাদের প্রতিপালক, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া উপদেশ গ্রহণ করে তাঁর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাহ্‌দের দলভুক্ত হই – রেফারেন্স সাজানো  হয়েছে [সূরা  নাম্বার/ আয়াত নাম্বার] অনুযায়ী 

১. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, সামাজিক অবস্থান, ধনসম্পত্তি, বংশ পরিচয়, পেশা ইত্যাদি সকল কিছু নির্বিশেষে সকল মানুষকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করুন। [১৭/৭০]
২. মানুষের সাথে কথা বলার সময় ছলচাতুরি বা অস্পষ্টতা পরিহার করুন। যা বলতে চান স্পষ্ট করে সরাসরি বলুন। [৩৩/৭০]
৩. সর্বোত্তম কথা বলুন এবং সর্বোত্তম পন্থায় বলুন। [১৭/৫৩, ২/৮৩]
৪. নরম গলায় নম্রভাবে কথা বলুন। উচ্চঃস্বরে কথা বলবেন না। [৩১/১৯]
৫. সর্বদায় সত্য কথা বলুন। অতিরঞ্জিত এবং কপট কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। [২২/৩০]
৬. সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করবেন না। [২/৪২]
৭. মুখে তা-ই বলুন যা আপানার মনের কথা। [৩/১৬৭]
৮. সমাজে প্রচলিত এবং সমাজের মানুষ বোঝে এমন ভাষায় সদ্ভাবে কথা বলুন। [৪/৫]
৯. মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে যা ন্যায়সঙ্গত তা-ই বলুন যদিও তা আপনজনের বিরুদ্ধে যায়। [৬/১৫২]
১০. দাম্ভিকতা (মানে গর্ব) এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ পরিহার করুন। [৩১/১৮]
১১. অসার ক্রিয়া-কলাপ থেকে এবং অসার কথাবার্তা বলা ও শোনা থেকে বিরত থাকুন। [২৩/৩, ২৮/৫৫]
১২. নিজেকে সকল প্রকার তুচ্ছ বিষয়ে জড়ানো থেকে বেঁচে থাকুন। অসার ক্রিয়া-কলাপে লিপ্ত লোকদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আত্মসম্মান বজায় রেখে সেখান থেকে চলে আসুন। [২৫/৭২]
১৩. হোক প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য, কোন প্রকার অশ্লীল ও বেহায়া কাজ এবং কথার ধারেকাছেও যাবেন না। [৬/১৫১]
১৪. যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার দ্বারা কোন মন্দকাজ সংঘটিত হয়েই যায় তাহলে সাথে সাথে নিজেকে সংশোধন করে নিন। [৩/১৩৫]
১৫. মানুষের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। [৩১/১৮]
১৬. ঔদ্ধত্যপূর্ণ পদক্ষেপে দম্ভভরে পৃথিবীতে চলাফেরা করবেন না। [১৭/৩৭, ৩১/১৮]
১৭. পৃথিবীর বুকে হাঁটাচলা করার সময় মধ্যম গতির পদক্ষেপে চলুন। [৩১/১৯]
১৮. শান্তভাবে এবং ধীরস্থির পদক্ষেপে নম্রভাবে চলাফেরা করুন। [২৫/৬৩]
১৯কামুক, অশ্লীল আড়চাহনি কিংবা কামপ্রবৃত্তিপূর্ণ দৃষ্টিপাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখুন। [২৪/৩০, ৪০/১৯]
২০. যে বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা না বলে চুপ থাকুন। কোন বিষয়ে না জেনে সে সম্পর্কে কথা বলাটা আপনার কাছে মামুলী মনে হতে পারে। কিন্তু এর পরিণতি যে কি ভয়াবহ, তা হয়ত আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। [২৪/১৫-১৬]
২১. কারোর সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনে থাকলেও তার বিষয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত সুধারনা পোষণ করতে থাকুন যতক্ষণ না সে বিষয়ে আপনি পুরোপুরি অবহিত হয়েছেন। সুস্পষ্ট এবং অকাট্য প্রমান ছাড়া কোন মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না। [২৪/১২-১৩]
২৪. কখনই ভাববেন না আপনি সবই জানেন এবং আপনার চেয়ে আর ভাল কেউ জানেনা। মনে রাখবেন, জ্ঞানীর উপরে জ্ঞানী আছেন আর সকল জ্ঞানীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন। [১২/৭৬]
এমনকি প্রিয় নবী (সা:) কেও তাঁর জ্ঞান বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাকে দোয়া’ করতে বলেছেন, “হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” [২০/১১৪]
২৫. মু’মিনগণ সকলেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। যেন তারা একই পরিবারভুক্ত সদস্য। নারী-পুরুষ সকলেই একে অপরের ভাইবোন। [৪৯/১০]
২৬. মানুষকে নিয়ে কখনই ঠাট্টা তামাশা করবেন না। [৪৯/১১]
২৭. অন্যের সম্মান বা মর্যাদাহানি হয় এমন কিছু করা যাবে না। [৪৯/১১]
২৮. বিকৃত নামে ডেকে কাউকে অপমান করা যাবে না। [৪৯/১১]
২৯. কল্পনা বা সন্দেহপ্রসূত ধারনা করা থেকে বেঁচে থাকুন। সন্দেহপ্রবতা সমাজের মানুষে মানুষে হৃদ্যতার বন্ধনকে মুছে ফেলে। [৪৯/১২]
৩০. একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করা থেকে বেঁচে থাকুন। [৪৯/১২]
৩১. একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করা থেকে বিরত থাকুন। [৪৯/১২]
৩২. মানুষের সাথে সাক্ষাতের সময় তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করুন এবং তাদের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করুন। কেউ আপনাকে অভিবাদন অর্থাৎ সালাম দিলে আপনি তারচেয়েও উত্তমরূপে উত্তর দিন, আর তা না পারলে অন্তত ততটুকু বলুন যতটুকু তিনি বলেছেন। [৪/৮৬]
৩৩. নিজের বাড়ী কিংবা অন্যের বাড়ীতে প্রবেশ করার সময় বাড়ীতে অবস্থানকারী লোকজনদের সালাম দিন। [২৪/৬১]
৩৪. অনুমতি না নিয়ে অন্যের বাড়ীতে প্রবেশ করবেন না। বাড়ীতে প্রবেশের সময় বাড়ীর লোকজনকে সালাম দিন এবং তাদের সুখ সমৃদ্ধির জন্য দোয়া’ করুন। [২৪/২৭]
৩৫. সদয় এবং সৌজন্যমূলক আচরণ করুনঃ
পিতামাতার সাথে;
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে;
*সহায় সম্বলহীন এবং সমাজে যাদের কেউ নেই তাদের সাথে। [৪/৩৬]
৩৬. যত্নবান হউনঃ
অভাবী ও হতদরিদ্র মানুষদের প্রতি;
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি;
সে সব অসচ্ছলদের প্রতি যাদের অপর্যাপ্ত উপার্জন দিয়ে অভাব কাটে না;
তাদের প্রতি যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে;
*তাদের প্রতি যারা চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। [৪/৩৬]
৩৭. আত্মীয় হোক অথবা অনাত্মীয় হোক, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করুন। সভা-সমাবেশে কিংবা যানবাহনে আপনার আশপাশের মানুষদের সাথেও সদয় ও সৌজন্যমূলক আচরণ করুন। [৪/৩৬]
৩৮. অভাবী মুসাফির, পথের আশ্রয়হীন বালক অথবা দারিদ্র পীড়িত অসহায় হয়ে যে আপনার দারস্থ হয়েছে- এদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। [৪/৩৬]
৩৯. আপনার অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। [৪/৩৬]
৪০. মানুষকে কোন কিছু দেওয়ার পর নিজের উদারতাকে জাহির করার জন্য বারবার সে বিষয়ে খোঁটা দিয়ে তাদের মনে কষ্ট দেবেন না। [২/২৬২]
৪১. মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে কোন প্রতিদান আশা করবেন না, এমনকি ধন্যবাদটাও নয়। [৭৬/৯]
৪২. সৎ কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করুন। মন্দ কাজে কখনই কাউকে সহায়তা করা যাবে না। [৫/২]
৪৩. অন্যায়ভাবে অপরের ধনসম্পত্তি কুক্ষিগত করা যাবে না। উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি অথবা বিচারকদের ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা থেকে বিরত থাকুন। [২/১৮৮, ৫৩/৩২]
৪৪. অন্যদের ভাল কাজের উপদেশ দিন। তবে নিজের সংশোধনের বিষয়টি সবার আগে। অন্যকে করতে না বলে নিজে করে দেখান। আগে নিজে চর্চা করুন, পরে প্রচার করুন। [২/৪৪]
৪৫. অন্যদের সংশোধন করার পূর্বেই নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে সংশোধন করার চেষ্টা করুন। [৬৬/৬]
৪৬. নিজেদের মধ্যে কেউ অজ্ঞানতাবশত কোন খারাপ কাজ করে বসলে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন, তার জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে ক্ষমা চান তারপর তাকে সংশোধন করুন। [৬/৫৪, ৩/১৩৪]
৪৭. আপনার ক্রোধ এবং অন্যান্য সব রকমের উগ্র আবেগকে সৃজনশীল শক্তিতে পরিণত করুন। এমন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলুন যাতে মানুষ আপনার সাহচর্য কামনা করে। তাদের কাছে হয়ে উঠুন মানসিক প্রশান্তির প্রতীক। [৩/১৩৪]
৪৮. মানুষকে প্রজ্ঞার সাথে ইসলামের দিকে ডাকুন এবং এক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করুন। তাদের সাথে ভদ্রতা বজায় রেখে তর্ক করুন। [১৬/১২৫]
৪৯. যারা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আল্লামীনের বিধানকে পাত্তা  দিতে চায় না, যাদের কাছে স্রষ্টার বিধান হাসি তামাশার বিষয়, তাদেরকে তাদের মতোই চলতে দিন। [৬/৭০]
৫০. আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের বিধানকে নিয়ে যারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে তাদের সাথে কোন আলোচনায় বসবেন না। তবে অন্য প্রসঙ্গে কথা হলে তাদের সাথে বসা যেতে পারে। [৪/১৪০]
৫১. আল্লাহ্‌ যাদেরকে অনুগ্রহ করেন তাদের ব্যাপারে হিংসা করবেন না বা তাদের প্রতি পরশ্রীকাতর হবেন না। [৪/৫৪]
৫২. জীবনের যে সকল ক্ষেত্রগুলোতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে সেই ক্ষেত্রগুলোতে অন্যদেরও সামিল হওয়ার সুযোগ দিন। [৫৮/১১]
৫৩. কোন ভোজ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলে সেখানে যথাসময়েই উপস্থিত হউন। আগেভাগে গিয়ে খাবার তৈরির অপেক্ষায় বসে থাকবেন না। আবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর খোশগল্পে মশগুল হয়ে উঠবেন না। এমন আচরণ আয়োজনকারীর জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। [৩৩/৫৩]
৫৪. পরিমিত পরিমাণে আহার করুন যা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। [৭/৩১]
৫৫. বেহিসেবির মতো ধনসম্পদ খরচ করে সবকিছুকে উড়িয়ে দেবেন না। [১৭/২৬]
৫৬কারো সাথে কোন বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হলে বা কাউকে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করুন। [১৭/৩৪]
৫৭. নিজেকে পাকপবিত্র রাখুন। [৯/১০৮, ৪/৪৩, ৫/৬]
৫৮. শোভনীয় এবং রুচিশীল পোশাক পরুন। অমায়িক চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে ভরে তুলুন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র। [৭/২৬]
৫৯. কেবলমাত্র হালাল পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করুন। [২৯/১৭, ২/১৮৮]
আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কবুল করুন আমরা যেন সেই সব লোকদের দলভুক্ত হতে পারি যারা তাঁর উপদেশ গ্রহণ করেন এবং বাস্তবে তা মেনে চলেন!
আমীন।

1 Comments

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

  1. মাশা-আল্লাহ জাযাকাল্লাহ

    ReplyDelete
Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال