গোপনে কেন নারায়ণগঞ্জ ছাড়ছে মানুষ?
, ঢাকা : দেশে করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার বা মূলকেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জকে। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক। দেখা গেছে শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৮২ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে আছেন ৮৩ জন।
গত কয়েকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ থেকে কিছু মানুষ গোপনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেছেন। এসব মানুষ হয়তো নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। যেসব জেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ গিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, ভোলা ও বরিশাল।
গত সপ্তাহের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেনী গিয়েছেন এমন দুজন ব্যক্তির জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে তারা ‘ছোটখাটো চাকুরীর’ সাথে সম্পৃক্ত। মার্চের ২৬ তারিখ থেকে কোন কাজ না থাকায় তারা গ্রামের বাড়ি ফেনীতে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
তাদের আশংকা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জে তারা যেখানে বসবাস করেন সে বাড়িতে বা তার আশপাশে যদি কারো দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া তাহলে হয়তো সে এলাকা থেকে আর বের হতে পারবেন না। সেজন্য তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান।
তারা জানান, নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে গেলে তাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে তারা কার্যত বন্দি জীবন-যাপন করছিলেন।
তবে দুজনেই জানিয়েছেন, গ্রামের বাড়িতে যাবার পর তারা পরিবারের সদস্যদের সাথেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে গোপনে বরিশালের উজিরপুরে যাওয়ার কারণে সেখানে বেশ কয়েটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও অ্যাম্বুলেন্সে করে কিছু মানুষ ঠাকুরগাঁও গিয়েছে। এখন সেসব ব্যক্তি এবং তাদের বহনকারী যানবাহন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে প্রশাসন।
দেশজুড়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও নারায়ণগঞ্জ থেকে দলে দলে মানুষ কিভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে সে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশের সংক্রামক রোগ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় সামাজিকভাবে একঘরে করে দেবার প্রবণতা বাড়ছে। এ বিষয়টি নিয়ে মানুষের মনে এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে।সেজন্য করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও এখন অনেকে পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে কোন বাসায় সন্দেহভাজন রোগীকে পরীক্ষা করতে আসলেই তার বাসা তথাকথিত লকডাউন হয়ে যাচ্ছে। তারা টেস্টের রেজাল্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করছে না। ফলে মানুষের মধ্যে রোগটা লুকিয়ে রাখা বা এক জায়গা থেকে পালিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবার প্রবণতা বাড়ছে।
তিনি বলেন, লকডাউন বিষয়টি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা দেবার একটি পদ্ধতি। এটাকে যদি ভয়াবহভাবে উপস্থাপন করা হয় তাহলে তো জনস্বাস্থ্যের জন্য যে উদ্দেশ্য , ভাইরাসটা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হবে।
নারায়ণগঞ্জের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরো বলেন, লকডাউন নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হবার কারণেই অনেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গোপনে অন্য এলাকায় চলে গেছে। তারা ভাবছে লকডাউনের সময় ঘরে বসে থাকবে, তারা না খেয়ে মারা যাবে। মৃত্যু হলেও কেউ দেখতে আসবে না। এই আশঙ্কা থেকেই তারা অন্য জায়গায় যাচ্ছে।