মুসলিম জীবনে সততা ও সত্যবাদিতা
লেখক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।”[ সূরা আত-তাওবা আয়াত- ১১৯ ]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ “সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী (তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা পুরস্কার প্রস্তত রেখেছেন)।” [ সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৫ ]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ “যদি আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা তারা সত্যে পরিণত করত, তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত।” [ সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ২১ ]
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি:
এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্ব বিষয়ে তাকে ভয় করে চলতে অর্থাৎ তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছেন।
দুই. আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন সত্যবাদীদের সঙ্গী হতে। তাই যারা অসৎ, তাদের সঙ্গ দেয়া নিষেধ।
তিন. সত্যবাদীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হল। আল্লাহ নিজেই তাদের সাথি হতে মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন।
চার. নারী হোক কিংবা পুরুষ, যে সত্যবাদী আল্লাহ তাআলা তার জন্য বিশাল পুরস্কার রেখেছেন।
পাঁচ. পরিস্থিতি যা-ই থাকুক, সর্বাবস্থায় সত্যবাদিতা অবলম্বনে রয়েছে মঙ্গল ও কল্যাণ।
এ বিষয়ের হাদীসসমূহ:
হাদীস – ১.
ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য নিয়ে যায় জান্নাতের পানে। নিশ্চয় মানুষ যখন সর্বদা সততা অবলম্বন করে, তখন আল্লাহর কাছে তাকে সত্যবাদি বলে তালিকাভুক্ত করা হয়। আর মিথ্যা অবশ্যই পাপাচারের পথ দেখায়। এবং পাপাচার জাহান্নাম পানে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়।” [ বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম ]
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. সত্যবাদিতার ফজিলত ও মিথ্যাবাদিতার পরিণাম বর্ণিত হল।
দুই. সত্যবাদিতা সর্বদাই মানুষকে সুপথে পরিচালিত করে।
তিন. মিথ্যাবাদিতা মানুষকে কুপথে পরিচালিত করে। এমনকি একটি মিথ্যা বিষয় প্রমাণ করতে আরো অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
চার. অব্যাহতভাবে সত্য চর্চা করলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদি বলে তার নাম লেখা হয়।
পাঁচ. অব্যাহতভাবে মিথ্যা বলতে থাকলে তার নাম আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীদের তালিকায় লেখা হয়ে যায়।
ছয়. সত্যের পুরস্কার জান্নাত আর মিথ্যার শাস্তি জাহন্নাম।
হাদীস – ২.
আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুখস্থ করেছি যে, “যা তোমাকে সন্দেহে পতিত করে তা ছেড়ে দিয়ে তার দিকে যাও, যা তোমাকে সন্দেহে পতিত করে না। সততা ও সত্যবাদিতা নিশ্চয় প্রশান্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী।” [ বর্ণনায়ঃ তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ]
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আলী রা. এর ছেলে হাসান রা. তার নানা নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীস মুখস্থ করেছেন বলে জানা গেল।
দুই. সন্দেহ জনক বিষয়-কে ‘না’ বলা। এবং যাতে কোন সন্দেহ নেই তা গ্রহণ করার জন্য এ হাদীস দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সত্যাসত্য যাচাই করে সন্দেহ জনক বিষয় সম্পর্কে চুরান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। যা সন্দেহ জনক বিষয় তা প্রচার করাও নিষেধ।
তিন. সততা ও সত্যবাদিতা প্রশান্তি দেয়। মানুষ সত্য কথা বলে মনে প্রশান্তি লাভ করে, যদি তা নিজেদের বিরুদ্ধেও যায়। আর মিথ্যা বলে মানসিকভাবে চিন্তিত থাকে। ভয় করে লোক সমাজে আমার মিথ্যা ধরা পরে যায় কিনা। আর আল্লাহর শাস্তির ভয় তো থেকেই যায়।
হাদীস – ৩.
আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে তিনি রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তার সাক্ষাতকারের বিবরণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, হেরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করল, ‘তিনি (মুহাম্মাদ) তোমাদের কী নির্দেশ দেন।’ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি বললাম, তিন বলেনঃ “তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। তোমাদের বাপ-দাদারা যা বলে, তা পরিত্যাগ কর।” আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা, কারো কাছে না চাওয়া ও আত্নীতার সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দেন।’
বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম
বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে যখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দূত সিরিয়ায় তার দরবারে উপস্থিত হল, তখন সেখানে উপস্থিত ছিল আবু সুফিয়ান। সে তখন ইসলাম গ্রহণ করেনি। রোম সম্রাট রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জানতে আবু সুফিয়ানকে দরবারে তলব করল। রোম সম্রাট তাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করল। আবু সুফিয়ান তার সঠিক উত্তর দিয়েছিল। সঠিক উত্তর না দিয়ে তার উপায় ছিল না।
দুই. ইবাদত করতে হবে শুধু মাত্র আল্লাহর। ইবাদত হতে হবে সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত
তিন. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপরীতে বাপ-দাদার কথা, সমাজের প্রচলিত নিয়ম-কানুন, দেশজ সংস্কৃতি সব কিছুই পরিত্যাজ্য।
চার. সালাত বা নামাজ ইসলামের একটি মূল বিষয়।
পাঁচ. সত্যবাদিতা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী চরিত্র। এ বিষয়টির সাথে আলোচ্য শিরোনামের সম্পর্ক।
ছয়. ‘মানুষের কাছে কোন কিছু না চাওয়া, ভিক্ষা না করা, নিজের অভাবের কথা অন্যকে না বলা’ একটি মর্যাদা সম্পন্ন ইসলামী চরিত্র। আরবীতে যাকে বলা হয়, আফাফ, তাআফফুফ বা ইফফাত। এর আভিধানিক অর্থ হল, নিজেকে পবিত্র রাখা।
সাত. আত্নীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে যত্নবান হওয়া, আত্নীয়-স্বজনের সাথে সুন্দর আচার-আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী চরিত্র।
আট. হাদীসটিতে বর্ণিত বিষয়গুলো : তাওহীদ, শিরক প্রত্যাখান, নামাজ, সততা-সত্যবাদিতা, আফাফ, আত্নীয়তায়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামের যাত্রা যখন শুরু তখন থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলোর প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন।
হাদীস – ৪.
আবু সাবিত থেকে বর্ণিত – তিনি কারো কাছে আবু সাঈদ নামে পরিচিত, কারো কাছে আবুল ওয়ালিদ নামে পরিচিত, তার মূল নাম সাহল বিন হুনাইফ তিনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাহাবী- তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে সত্যিকার ভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে শাহাদাত কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দেবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে।”
[ বর্ণনায়ঃ মুসলিম ]
[ বর্ণনায়ঃ মুসলিম ]
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য তার পথে জীবন দান করার নাম হল শাহাদত। শাহাদত মানে শহীদ হওয়া। শাহাদতের একটি অর্থ হল স্বাক্ষী দেয়া, উপস্থিত থাকা। যে আল্লাহর পথে শহীদ হয়, সে তো সাধারণ মৃত মানুষের মত নয়, বরং জীবিত। তাই তাকে শহীদ বলা হয়। সে যেন উপস্থিত থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে। যে আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাকে শহীদ বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিভাষা। তবে আল-কুরআনুল কারীমে এ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়নি।
দুই. শহীদ ইসলামী পরিভাষা। তাই এটি ভিন্ন ধর্মের বা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের জন্য ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না। কেহ ব্যবহার করলে সেটা হবে জালিয়াতি।
তিন. শাহাদতের যেমন ফজিলত ও মর্যাদা আছে, তেমনি আল্লাহর কাছে শাহাদত কামনা করার ফজিলতও এ হাদীস দিয়ে প্রমাণিত।
চার. শাহাদত কামনা করতে হবে সততার সাথে। অন্যকে শুনিয়ে নিজের মর্যাদা বড় করার নিয়তে কেহ মুখে মুখে শাহাদত কামনা করলে সে শহীদি মর্যাদা পাবে না। সততার সাথে শাহাদত কামনা শর্ত। বিষয় শিরোনামের সাথে হাদীসের সম্পর্ক এখানেই। শাহাদত কামনা করার মধ্যে সততা থাকা জরুরী। নয়তো সে কামনা কোস ফল দেবে না।
পাঁচ. সততার সাথে কেহ ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া’ কামনা করলে আল্লাহ তাকে সেই মর্যাদা অর্থাৎ শহীদি মর্যাদা দেবেন। যদি সে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে তবুও। এটি সততার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পুরস্কার।
ছয়. মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেআমাত কত ব্যাপক। আল্লাহর পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়া কামনা করার কারণে আল্লাহ তাকে তাঁর জন্য জীবন উৎসর্গকারী হিসাবে গণ্য করবেন।
হাদীস – ৫.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কোন একজন নবী যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার লোকদের বললেন, যে ব্যক্তি বিয়ে করেছে, স্ত্রীর সঙ্গ লাভ করতে চায় কিন্তু এখনো করেনি, এবং যে ব্যক্তি ঘর নির্মাণ করেছে কিন্তু এখনো ছাদ দেয়নি আর যে ব্যক্তি বকরী বা উট ক্রয় করে তার বাচ্চার অপেক্ষায় আছে, তারা যেন যুদ্ধে আমার সাথে যোগ না দেয়। এরপর তিনি যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গেলেন। আছরের নামাজ অথবা তার নিকটবর্তী সময়ে যুদ্ধের নির্ধারিত স্থানে পৌছে গেলেন। এরপর তিনি সুর্যকে বললেন, তুমি আল্লাহর আদেশের অনুগত আর আমিও তার অনুগত। হে আল্লাহ! আপনি সুর্যকে আমাদের জন্য আটকে রাখুন। ফলে সুর্যকে আটকে রাখা হল যুদ্ধ জয় না হওয়া পর্যন্ত। অত:পর তিনি যুদ্ধলব্ধ সকল মাল-সম্পদ একত্রিত করে রাখলেন যাতে আগুন এসে সেগুলোকে জ্বালিয়ে দেয়। আগুন আসল কিন্তু সেগুলোকে জ্বালিয়ে দিল না। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেহ যুদ্ধলব্ধ সম্পদে খেয়ানত করেছে। তাই প্রত্যেক গোত্রের একজন করে আমার হাতে শপথ নেবে। এভাবে শপথ নেয়ার সময় একজনের হাত তার হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমাদের (গোত্রের) মধ্যে খিয়ানতকারী রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের সব লোককেই আমার হাতে শপথ নিতে হবে। এভাবে শপথ নেয়ার সময় দু জন বা তিনজনের হাত তার হাতে আটকে গেল। তখন তিনি তাদের বললেন, তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। এরপর তারা একটি গরুর মাথার পরিমাণ স্বর্ণের টুকরা হাজির করল। সেটাকে তিনি যুদ্ধলব্ধ সম্পদের সাথে রাখলেন। এরপর আগুন এসে সব জ্বালিয়ে দিল। আমাদের পূর্বে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনীমত) কারো জন্য হালাল করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা আমাদের দুর্বলতা ও অপারগতার প্রতি লক্ষ রেখে আমাদের জন্য এটা হালাল করে দিয়েছেন।” [ বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম ]
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব প্রমাণিত। পূর্ববর্তী নবীদের যুগেও জিহাদ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
দুই. তিন প্রকার লোককে অংশ না নিতে বলা হয়েছিল। কারণ তাদের পিছু টান রয়েছে। ফলে তারা সততা ও আন্তরিকতার সাথে জিহাদ করতে পারবে না।
তিন. নবীদের মুজিযা ও আল্লাহর দরবারে তাদের দুআ কবুলের বিষয়টি এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হল।
চার. পূর্ববর্তী নবীদের যুগে গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও কুরবানী মানুষেরা ভোগ বা ব্যবহার করতে পারত না। আল্লাহর পক্ষ থেকে এগুলো তাদের জন্য হালাল করা হয়নি।
পাঁচ. তাদের জিহাদ ও কুরবানী কবুলের আলামত ছিল, আকাশ হতে আগুন এসে এগুলোকে জ্বালিয়ে দিত। আগুন এগুলো জ্বালিয়ে না দিলে প্রমাণিত হত যে, জিহাদ বা কুরবানী আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি।
ছয়. উম্মাতে মুহাম্মাদীর মর্যাদা ও তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের আধিক্যের কারণে কুরবানী ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ তাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তাদের পূর্বে কোন জাতির জন্য এগুলো হালাল ছিল না।
সাত. খেয়ানত, দুর্নীতি হল সত্যবাদিতা ও সততার পরিপন্থী বিষয়। এটা এত বড় অন্যায়, যার কারণে নবীর সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়ার সওয়াবও বৃথা যেতে পারে।
আট. আল্লাহ তাআলা কারো তাওবা কবুল করলে তাকে গুনাহের শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
হাদীস – ৬.
আবু খালেদ হাকীম ইবনে হিযাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয় বাতিল করে দেয়ার অধিকার রাখে যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যায়। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং স্পষ্ট বর্ণনা দেয় তাবে তাদের বেচা-বিক্রিতে বরকত হয়। আর যদি তারা (পণ্যের দোষ-ত্র“টি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে তাহলে তাদের কেনা-বেচার বরকত বিনষ্ট করে দেয়া হয়।”
[বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম ]
[বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম ]
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয় বিক্রয়ের মৌখিক চুক্তি করা শেষ করলেও তাদের উভয়ের অধিকার রয়েছে যে, তারা ক্রয়-বিক্রয়টি বাতিল বা অকার্যকর করে দিতে পারে। ইসলামী আইনের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় খিয়ারুল মাজলিছ।
কিন্তু যদি তারা ক্রয় বিক্রয়ের কথা চুরান্ত করে কথা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে বিক্রয় বাতিল করার অধিকার আর থাকে না। অবশ্য এটার পদ্ধতি নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেহ বলেছেন, আলাদা হয়ে যাওয়ার অর্থ মৌখিকভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া, শারিরিকভাবে নয়। কেহ বলেছেন, আলাদা হওয়ার অর্থ হল শারিরিকভাবে আলাদা হওয়া মৌখিকভাবে নয়।
কিন্তু যদি তারা ক্রয় বিক্রয়ের কথা চুরান্ত করে কথা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে বিক্রয় বাতিল করার অধিকার আর থাকে না। অবশ্য এটার পদ্ধতি নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেহ বলেছেন, আলাদা হয়ে যাওয়ার অর্থ মৌখিকভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া, শারিরিকভাবে নয়। কেহ বলেছেন, আলাদা হওয়ার অর্থ হল শারিরিকভাবে আলাদা হওয়া মৌখিকভাবে নয়।
দুই. ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে সততা ও সত্যিবাদিতা অপরিহার্য।
তিন. ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে পণ্যের দোষ-গুণ স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করতে হবে। কোন দোষ গোপন করা জায়েয নয়। পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে ব্যবসা করলে তাতে বরকত হয় না।
চার. ক্রয়-বিক্রয়ে সততা, বরকত বা সচ্ছলতা আনয়ন করে।
পাঁচ. ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা বাণিজ্যে মিথ্যা বললে, পণ্যের দোষত্র“টি গোপন করলে ব্যবসার বরকত চলে যায়।
[হাদীসগুলো ইমাম নববী রহ. এর রিয়াদুস সালেহীন থেকে নেয়া ]