যেসব বলিউড হিন্দু তারকারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন




তারকাদের মধ্যে প্রায়ইধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয় লক্ষ্য করা যায়। বলিউড তারকারা এক্ষেত্রে এগিয়ে। বলিউডের বেশ কয়েকজন তারকা রয়েছেন যারা নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। কেউ হয়েছেন ভালো লাগা থেকে। আবার কেউ গ্রহণ করেছেন নিজের প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি ঘটাতে। সেসব ধর্মান্তরিত তারকাদের নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের আয়োজন।
এ আর রহমান: ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকদের একজন অস্কারজয়ী এ আর রহমান। সঙ্গীত জগতে সারা বিশ্বের কাছে এক নামেই পরিচিত তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তার পূর্বের নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। সুফি সঙ্গীতের প্রেরণা থেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এ আর রহমান। ১৯৮৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দিলীপ কুমার থেকে ‘আল্লা রাখা রহমান’ অর্থাৎ এ আর রহমান-এ পরিণত হন তিনি।
মমতা কুলকার্নি: ৯০’র দশকে বেশ কয়েকটি হিন্দি সুপার হিট ছবির নায়িকা মমতা কুলকার্নি। অভিনয়ের পাশাপাশি তার সৌন্দর্যেও দ্যুতি ছড়িয়েছে। মমতা কুলকার্নি হঠাৎ করেই পর্দা থেকেই উধাও। পরবর্তীতে কারণ হিসেবে দেখা গেছে ২০১৩ সালে মমতা মুসলিম প্রেমিককে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে স্বামীকে নিয়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে বসবাস করছেন তিনি।
শর্মিলা ঠাকুর: বলিউডের স্বনামধন্য অভিনেত্রীদের তালিকায় রয়েছেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন এ অভিনেত্রী। প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি দিতেই ধর্ম (কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন) পরিবর্তনের পথ বেছে নেন এ অভিনেত্রী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি মনসুর আলি পতৌদিকে বিয়ে করেন। শর্মিলার তিন সন্তানের সাইফ আলি খান, সোহা আলি খান, সাবা আলি খান প্রত্যেকেই ইসলাম ধর্মের অনুসারী ধর্মান্তরিত হওয় পর তার নামকরণ করা হয় আয়েশা।
ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনি: ৭০’র দশকের সবচেয়ে সফল বলিউড তারকা যুগল ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনি। হেমার জন্ম একটি হিন্দু তামিল পরিবারে। প্রেমিক ধর্মেন্দ্রও হিন্দু ছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক বিবাহে রূপ নিতে পারছিল না। কেননা ধর্মেন্দ্র ছিলেন বিবাহিত। তার প্রথম বিয়ে করা স্ত্রীর নাম ছিল প্রকাশ কর।
হিন্দু শাস্ত্রমতে প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকতে (কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন) স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। তাই বিয়ের জন্য তাদের সামনে একটি পথই খোলা ছিল। আরও সেটি হল ধর্মান্তরিত হওয়া। করলেন ও তাই। দুজনই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৯ সালের ২১ আগস্ট ইসলাম ধর্ম মতে বিয়ে করেন হেমা মালিনি ও ধর্মেন্দ্র। বিয়ের পর হেমার নাম বদলে রাখা হয় আয়েশা আরও ধর্মেন্দ্রর নাম রাখা হয় দেলওয়ার খান।
অমৃতা সিং: জন্মসূত্রে শিখ ধর্মের অনুসারী ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী অমৃতা সিং। ১৯৮৩ সালে ‘বেতাব’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। এরপর তার অভিনেত্রী ‘সানি’ ‘মারদ’ ‘সাহেব’ ছবিগুলো দারুণ ব্যবসা সফল হয়। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অভিনেতা সাইফ আলি খানকে বিয়ে করেন। যদিও বিয়েটি শেষ পর্যন্ত টিকেনি।
হ্যান্স রাজ হ্যান্স: জনপ্রিয় ভারতীয় গায়ক হ্যান্স রাজ হ্যান্স। হিন্দু ধর্মের হলেও নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। মূলত সুফি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্টতা থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয় তার। পরবর্তীতে (কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন) ইসলামের ইতিহাসের ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করেন তিনি। ধর্ম পরিবর্তনের পর মদিনা সফরের পরিকল্পনা করছেন বলেও জানা গেছে। উল্লেখ্য, ‘আজা নাচলে’ ‘দিল টুটে টুটে’ প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের গায়ক হ্যান্স।
জুভান শংকর রাজা: কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী ইলাইয়া রাজার পুত্র জুভান শংকর রাজা। কিন্তু শুধু পিতার নামেই পরিচিত নন জুভান। কম বয়সী গীতিকার হিসেবে তার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই প্রথম গানের (কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন) কম্পোজ করেন তিনি। জুভানের পিতা ইলাইয়া রাজা ছিলেন কট্টর হিন্দু। মূলত কোরআন পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম চর্চা শুরু করেন। পারিপারিকভাবে তার ধর্ম পরিবর্তনের বিষয় মেনে না নিলেও তিনি মুসলিম ধর্মে পথই বেছে নিয়েছেন।
আয়েশা টাকিয়া: বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আয়শা টাকিয়া। পারিবারিকভাবে ভিন্ন ধর্মে বেড়ে উঠেছেন এ অভিনেত্রী। বাবা ছিলেন হিন্দু আর মা ছিলেন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান। হিন্দু হয়েও আয়েশা টাকিয়া দীর্ঘ সময় প্রেম করেছেন মুসলিম প্রেমিক ফারহান আজমির সঙ্গে।
এরপর ২০০৯ সালে ওই জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের আগেই আয়েশা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। যদিও তিনি কখন ওই ধর্মান্তরের বিষয়টি প্রকাশ করেননি। তবে তার ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মিকাইল আজমি নামে তাদের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে
কুরআনের ভুল ধরতে গিয়ে সূরা ইখলাস পড়েই মুসলিম
ইরিনা হানদোনো ইন্দোনেশিয়ার সুপরিচিত নও-মুসলিম। ১৯৮৩ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। বর্তমানে একজন দা‘ঈ বা ইসলাম প্রচারক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নও-মুসলিমদের জন্য ইরিনা সেন্টার নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন এই নারী। ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত তাঁর একটি আত্মকথার কিছু নির্বাচিত অংশ দেয়া হলো—
আমি ইন্দোনেশিয়ার একটি ধার্মিক খ্রিস্টান পরিবারে বেড়ে উঠি। আমি প্রাচুর্যের ভেতরই বড় হয়েছি। আমার পরিবার ছিল ধনী। তারা আমার শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে সব করেছে। তখন সমাজের প্রচলিত ধারণা ছিল, খ্রিস্টানরা দেশের বেশির ভাগ মানুষ থেকে ভিন্ন।
তারা ধনী, শিক্ষিত। সুন্দর সুন্দর জুতা পরে। আর মুসলিম হওয়ার অর্থ— তারা দরিদ্র, অশিক্ষিত এবং মসজিদের সামনে থেকে তাদের কম দামি স্যান্ডেলও চুরি হয়ে যায়।
খুব ছোট থেকে আমি ধর্মীয় অনুপ্রেরণা লাভ করি। আমি স্রষ্টার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছা পোষণ করতাম। কিশোর বয়সে স্থানীয় চার্চের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতাম।
একজন নান হওয়ার প্রবল স্বপ্ন ছিল আমার। একজন ক্যাথলিক হিসেবে জাগতিক জীবন চার্চে কাটাতে চাইতাম, যেখানে সবাই ভালো কাজ করে। হাইস্কুল স্তর শেষ করার পর দীক্ষা নিতে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই।
অবশ্য আমার সিদ্ধান্তে আমার পরিবার বিস্মিত হয়। কারণ পাঁচ ভাই-বোনের ভেতর আমি ছিলাম একমাত্র মেয়ে। তাঁরা আমাকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতেন না। তবে আমার দৃঢ়তা দেখে তাঁরা নমনীয় হন এবং আমার ইচ্ছা পূরণে সম্মতি দেন।
একজন শিক্ষানবিশ নান হিসেবে আমি কাজ শুরু করি। এজন্য আমাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তবে চার্চের বাইরে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়েছিল। সেখানে ধর্ম-দর্শন বোঝার জন্য তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হয়। আমি এ সময় ইসলাম ধর্মের তাত্ত্বিক আলোচনায় মনোযোগী হলাম। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশে জন্মালেও এটিই ছিল ইসলাম সম্পর্কে আমার প্রথম জ্ঞানার্জন।
চার্চের সেই প্রশিক্ষণে আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু কুসংস্কারের চর্চা দেখতে পাই, যা আমি খ্রিস্টসমাজে আগেও দেখেছিলাম। মুসলিমরা দরিদ্র, অশিক্ষিত, অসভ্য ইত্যাদি। অবশ্য আমার ২০ বছর বয়সে আমি এসব কুসংস্কার কখনো গ্রহণ করিনি, বরং নিজে বিচার-বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি।
আমি অন্যান্য দেশ সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করলাম। বিশেষত অমুসলিম দেশ সম্পর্কে। আমি দেখলাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দারিদ্র্যের শিকার আরো অনেক দেশ আছে। যেমন— ভারত, চীন, ফিলিপাইন, ইতালি (তখন) এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ।
আমি আমার শিক্ষকের কাছে ইসলাম সম্পর্কে পড়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমার অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা খুঁজে বের করা। আমার মিশন শুরু হলো।
আমি কুরআন নিয়ে বসলাম এবং এমনসব বিষয় অনুসন্ধান শুরু করলাম, যা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারব। আমি তখনো জানি না, কোরআন ডান দিক থেকে পড়তে হয়। অন্যান্য বইয়ের মতো বাঁ দিক থেকে পড়তে লাগলাম।
প্রথমেই আমার চোখে পড়ল— ‘বলুন! তিনি আল্লাহ। তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। এবং কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।’ (সূরা ইখলাস)
কুরআনের এই সূরা পড়ে মুগ্ধ হলাম। আমার অন্তর সাক্ষ্য দিল আল্লাহ এক। স্রষ্টার কোনো সন্তান নেই। তিনি কারো সৃষ্টি নন। কোনো কিছুই তাঁর সমকক্ষ নয়। সূরা ইখলাস পাঠ করার পর একজন যাজকের কাছে স্রষ্টায় বিশ্বাসের মূলকথা কী জানতে চাইলাম।
তাঁকে বললাম, আমি বুঝছি না একজন ঈশ্বর একই সময়ে একজন ও তিনজন কিভাবে হয়? তিনি বললেন, স্রষ্টা মূলত একজন। তবে তাঁর তিনটি প্রকাশ বা ব্যক্তিত্ব রয়েছে। ঈশ্বর যিনি পিতা, ঈশ্বর যিনি পুত্র, ঈশ্বর যিনি পবিত্র আত্মা। এটিকেই ত্রিত্ববাদ বলা হয়। তাঁর ব্যাখ্যা আমি গ্রহণ করলাম। কিন্তু রাতে সূরা ইখলাসের বক্তব্যগুলো আমার চিন্তায় উঁকি দিতে থাকে— স্রষ্টা একজন। তিনি কারো জাতক নন। কেউ তাঁর সন্তান নয়।
পরদিন সকালে আমি আবারও আমার শিক্ষকের কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, ত্রিত্ববাদের ধারণাটি আমার বুঝে আসছে না। তিনি আমাকে একটি বোর্ডের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি ত্রিভুজ এঁকে বললেন, এখানে ত্রিভুজ একটি। কিন্তু তার দিক বা বাহু তিনটি। ত্রিত্ববাদের ধারণাটিও ঠিক তেমন।
তাঁর বক্তব্যের পর আমি বললাম, তাহলে তো এটিও সম্ভব আমাদের প্রভুর চারটি দিক বা বাহু থাকবে। তিনি বললেন, তা সম্ভব নয়। আমি জানতে চাইলাম কেন? তিনি অধৈর্য হলেন। বারবার বলতে লাগলেন, সেটি সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি প্রশ্ন করেই গেলাম।
এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ত্রিত্ববাদের এই ধারণা আমি গ্রহণ করেছি। তবে তা আমার বুঝে আসে না। তুমিও এটি মেনে নাও, হজম করো। বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা পাপ। কিন্তু আমি হজম করতে পারলাম না।
রাতে আবারও কোরআনের কাছে ফিরে এলাম। সুরা ইখলাস পাঠ করলাম, যেন কিছু আমার অন্তরে প্রবেশ করল। আমার কোনো সংশয় রইল না আল্লাহ এক।
আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ও গবেষণা থেকে বুঝতে পারলাম ত্রিত্ববাদের ধারণা মানুষের তৈরি, যার উদ্ভব হয়েছে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দের পর। আগে তা ছিল না। বিষয়টি আমার ক্যাথলিক পরিচয়কেই বোঝা করে তুলল।
এরপর মুসলিম হতে এবং নতুন ধর্মবিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে আমার ছয় বছর লেগেছিল। যখন আমি ইসলাম গ্রহণের আবেদন করলাম, ধর্মীয় পণ্ডিত জানতে চাইলেন, আমি কি পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত? তিনি বললেন, ইসলাম গ্রহণ করা সহজ। কিন্তু পরবর্তী জীবনে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।
আমি প্রস্তুত ছিলাম। নিজেকে রক্ষা করার, নিজের আত্মাকে রক্ষা করার অধিকার আমার ছিল। অমূলক কোনো মতবাদ নিয়ে পড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ইসলাম গ্রহণের পর আমি আমার পরিবার ও সম্পদ হারাই। আমি একা হয়ে যাই। পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল না। তবে আল্লাহ আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার আশ্রয়
একজন নতুন মুসলিম হিসেবে আমি আমার করণীয় সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতাম, রমযানে রোযা রাখতাম এবং হিজাব পরতাম।
আগেও আমার জীবন ছিল স্রষ্টার জন্য উৎসর্গিত। এখনো আমার জীবন আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আলহামদুলিল্লাহ! আমার জীবন শুধু আল্লাহর জন্য।
সুসংবাদ নিয়ে এলো মাহে রমজান!
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মাস হলো মাহে রমজান। এটা ফযিলাতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস।
মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জন করার মৌসুম। মাহে রমজানের প্রধান আমল হলো ফরজ রোজা। রোজা ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’।
আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ও বিধান দেওয়া হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা:১৮৩) রমজান মাস আসে মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে।
তাইতো রাসুল (সা:) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (নাসায়ী, আল মুসতাদরাক) এই মাস মুমিনের অতীতের গুনাহ সমূহকে মুছে দেয়। রাসুল (সা:) বলেন,
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারী ও মুসলিম) রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা:) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) লোকদের মধ্যে অতিদানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমজান মাস এলে তার দানশীলতা অনেক বেড়ে যেত। (বুখারী ও মুসলিম) রমজানে কোন রোজাদারকে ইফতার করানোর কারণে অনেক নেকি লাভ হয়। রাসুল (সা:) বলেন,
যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে, তবে রোজাদারের নেকি একটুও কমবে না। (তিরমিজি) রমজান মাসে নফলের বিনিময় ফরজ সমতুল্য এবং একটি ফরজের বিনিময় সত্তরটা ফরজের নেকি দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
কিন্তু মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, রোজা আমার জন্য আর উহার প্রতিদান আমিই দিব। (বুখারী) ফযিলতের মাস এই মাহে রমজানেই সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য হেদায়েতের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাস।
এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা:১৮৫) সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
কাজেই নিজেই নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ফলে তিনি আত্মশুদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সা:) ঘোষণা করেছেন;
যে লোক ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানের রোজা পালন করবে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ)।
এই মাসেই লাইলাতুল কদর অর্থাৎ কদরের রাত, যে রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। (সূরা কদর:২) তাইতো এই মাস অন্য সকল মাস থেকে ফজিলত পূর্ণ। পরিশেষে বলা যায়, আসুন সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, পরনিন্দা, অশ্লীলতা ও সকল খারাপ কাজ পরিহার করে তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মাহে রমজানের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে এলো মাহে রমজান!
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মাস হলো মাহে রমজান। এটা ফযিলাতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস।
মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জন করার মৌসুম। মাহে রমজানের প্রধান আমল হলো ফরজ রোজা। রোজা ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’।
আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ও বিধান দেওয়া হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা:১৮৩) রমজান মাস আসে মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে।
তাইতো রাসুল (সা:) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (নাসায়ী, আল মুসতাদরাক) এই মাস মুমিনের অতীতের গুনাহ সমূহকে মুছে দেয়। রাসুল (সা:) বলেন,
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারী ও মুসলিম) রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা:) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) লোকদের মধ্যে অতিদানশীল ছিলেন। বিশেষ করে রমজান মাস এলে তার দানশীলতা অনেক বেড়ে যেত। (বুখারী ও মুসলিম) রমজানে কোন রোজাদারকে ইফতার করানোর কারণে অনেক নেকি লাভ হয়। রাসুল (সা:) বলেন,
যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে, তবে রোজাদারের নেকি একটুও কমবে না। (তিরমিজি) রমজান মাসে নফলের বিনিময় ফরজ সমতুল্য এবং একটি ফরজের বিনিময় সত্তরটা ফরজের নেকি দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
কিন্তু মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, রোজা আমার জন্য আর উহার প্রতিদান আমিই দিব। (বুখারী) ফযিলতের মাস এই মাহে রমজানেই সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য হেদায়েতের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাস।
এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা:১৮৫) সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
কাজেই নিজেই নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ফলে তিনি আত্মশুদ্ধি অর্জনে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সা:) ঘোষণা করেছেন;
যে লোক ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানের রোজা পালন করবে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ)।
এই মাসেই লাইলাতুল কদর অর্থাৎ কদরের রাত, যে রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। (সূরা কদর:২) তাইতো এই মাস অন্য সকল মাস থেকে ফজিলত পূর্ণ। পরিশেষে বলা যায়, আসুন সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, পরনিন্দা, অশ্লীলতা ও সকল খারাপ কাজ পরিহার করে তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে মাহে রমজানের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

Post a Comment

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال