*******************************************
নবী, রাসুলদের পুণ্য ভূমি ফিলিস্তিনে আগে যে মসজিদগুলো মুসল্লিতে পরিপূর্ণ থাকতো সেগুলোতে এখন কাউকে প্রবেশই করতে দেয়া হয় না। নিজেদের দখলে নিয়ে মসজিদগুলোকে সিনেগাগা, মদের দোকান, জাদুঘর, ক্যাফে বা রেস্তোরাঁ বানানো হচ্ছে।’
১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখলদারত্বের পর ফিলিস্তিনিরা জীবন বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হলে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আইন পাস করে ইসরাইল। ‘ইসরাইলি পার্লামেন্টে পাস করা বাজেয়াপ্ত আইনে অনুপস্থিত আরব মুসলমানদের বাড়িঘর, সম্পত্তি দখলে নেয়া হয়।
ফিলিস্তিনের টাইবেরিয়াসে নির্মিত বিখ্যাত একিটি মসজিদ হল ওমারি মসজিদ। ফিলিস্তিনে নিযুক্ত অটোমান শাসক জহির আল ওমার আল জায়দানি ১৭৪৩ সালে খান স্কয়ারে এটি তৈরি করেন। টাইবেরিয়াসের বিখ্যাত এ স্থাপনাটি জায়দানি মসজিদ নামেও পরিচিত। মিশরের মামলুক শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যবাহী কারুকার্যে তৈরি বিশাল গম্বুজ এবং মিনারের কারণে প্রসিদ্ধ ছিল ওমার মসজিদ। যা এখন পরিত্যক্ত এবং এটি সংষ্কারের অনুমতি দেয়া হচ্ছেনা এবং এতে কাউকে নামাজও পড়তে দেয়া হচ্ছেনা।
১৯৪৮ সালে আমূল পাল্টে যায় ফিলিস্তিনিদের সবকিছু। ওই বছরের ১৪ মে বিশ্ব ইহুদি সংগঠনের প্রধান ডেভিড বেন গুরিয়ন ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। দিনটিকে ইসরাইলিরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। ১৫ মে দিনটিকে ’নাকবা’ বা ’মহাবিপর্যয়’ হিসেবে স্মরণ করে ফিলিস্তিনিরা।
ওই সময় ফিলিস্তিনের অর্ধেক বাসিন্দা জীবন বাঁচাতে নিজেরদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে তাদের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় ইহুদি দখলদাররা। যাতে অন্তর্ভূক্ত হয় ওমারি’র মতো বহু ঐতিহ্যবাহী মসজিদ।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০টি মসজিদ ইসরাইলিরা ধংস করে দিয়েছে বা সেগুলোতে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। আরো ১৭টি মসজিদকে মদের দোকান, হোটেল, জাদুঘর, সিনেমা হলে পরিণত করা হয়েছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, উত্তরাঞ্চলীয় সাফেদ শহরের আল আহমার মসজিদকে কনসার্ট হলে রূপান্তর করা হয়েছে। কৈসরিয়ার আল জাদিদ মসজিদকে বানানো হয়েছে মদের দোকান।
১৯৪৮ সালে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের আল-হামরা মসজিদটি দখল করে নেয়। যা বর্তমানে ইসরাইলের সাফেদ পৌরসভার অন্তর্গত একটি নাইট ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মুসলমানদের নামাজের এ প্রাচীন পবিত্র স্থানকে মদ পানের বার ও আনন্দ ফুর্তির জায়গায় পরিণত করেছে।
প্রাচীন আল-হামরা মসজিদ দখলের পর ইসরাইল প্রথমে এটিকে একটি ইয়াহুদি স্কুলের কাজে ব্যবহার করে। কিছুদিন স্কুল চালানোর পর এটিকে ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নির্বাচনী প্রচারণার অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তারপর এটিকে একটি কাপড়ের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবার এটিজে নাইট ক্লাব ও বারে পরিণত করে। তারা এ মসজিদটিকে ‘খান আল-আহমার’ নামে নামকরণ করেছে।
মসজিদটির পবিত্রতা রক্ষা এবং তা ছেড়ে দেয়ার জন্য স্থানীয় একটি ইসলামিক সংস্থার সেক্রেটারি খাইর তাবারি আদালতে আবেদন করেছেন। বিষয়টি ইসরাইলের আদালতের নাজারাথের সিদ্ধান্তে অপেক্ষায় রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮ সালে যখন মুসলিমদের সাফেদ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়; তখন সেখানে প্রায় ১২ হাজার মুসলিমের বসবাস ছিল। বর্তমানে সেখানকার মুসলিমরা তাতে নামাজ আদায় করতে পারে না। তবে সেখানে অন্য সব কাজে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
মসজিদকে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরাইল। ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটিতে ৪শ’ মসজিদ রয়েছে। গেলো ২৫ বছরে সেখানে মুসল্লির সংখ্যা ৫ গুণ বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়।
যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন বলেই প্রতিয়মান হয় কারন গত ৭০ বছরে সেখানে একটিও নতুন মসজিদ নির্মাণ হয়নি শুধু পুরাতন মসজিদ সংষ্কার হয়েছে মাত্র!
সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর, গালফ নিউজ