SSF-মেজর রাসেদ সিনহা |
ওসি প্রদীপ কুমারের নির্দেশেই মেজর রাশেদ সিনহাকে ক্রসফায়ার-
একজন মেজরের মূল্য যেনো কিছুইনা। 👉 হাতের মোয়া 😠
তথ্য-উপাত্য বলছে- কক্সবাজারের টেকনাফের ক্রসফায়ার সম্রাট খ্যাত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশেই মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়।
টেকনাফের ভয়ংকর ওসি প্রদীপ মাদক নির্মূলের ঘোষনা দিয়ে এই পর্যন্ত যতগুলো কথিত বন্দুক যুদ্ধ দেখিয়েছে, সব কটিতে মাদক, অস্ত্র ও হত্যা তিনটি মামলা রুজু করে সে। এতে এলাকার ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। এরপর শুরু হয় গ্রেফতার বাণিজ্য। তারপর মামলার চার্জশীট থেকে আসামী বাদ দেওয়া ঢুকিয়ে দেওয়ার অজুহাতে আদায় করে কোটি কোটি টাকা। তাছাড়া সে এখন টেকনাফের মহারাজা! থানায় মামলা নেয়া না নেয়া, আসামী ধরা ছাড়া, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মাসোহারা সহ সব মিলিয়ে মাসে শতকোটি টাকা উপার্জন তার। (সূত্র:https://bit.ly/3k1OvGt)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি’র দেওয়া উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ওসি প্রদীপ কুমারের নির্দেশে ১৪৪টি “ক্রসফায়ার” ও “বন্দুকযুদ্ধে”র ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মারা গেছেন ২০৪ জন সাধারণ মানুষ। (সূত্র: https://bit.ly/2XjE47F)
টেকনাফের এই প্রদীপ কুমার সেই ওসি যার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অনেকবার তার চাঁদাবাজী, স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ইয়াবার নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানী, মিথ্যা মাদক মামলায় ধনীদের ফাঁসিয়ে কোটি টাকা ঘুষ নেয়া ইত্যাদি বহু রিপোর্ট গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ হেডকোয়ার্টার কেন যে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয় নি ও নিচ্ছে না, সেটা খুবই সন্দেহজনক। (সূত্র: নিচে দেখুন-)
সামান্য এক ওসি থেকে টেকনাফে ইয়াবা-বাণিজ্যে সহায়তা করে, ইয়াবা ব্যবসার ভয় দেখিয়ে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, ক্রস ফায়ারের হুমকী দিয়ে জনসাধারণকে হয়রানী করে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া এই ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে জমি কিনে বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়েছে। এমনকি সে ভারতের আসামের রাজধানী গৌহাটি শহরের পল্টন স্টেশনের পাশে অভিজাত দুটি বাড়ী করেছে। (সূত্র: নিচে দেখুন-)
এছাড়া ২০১৮ সালে কক্সবাজার বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীকে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এলাকা না ছাড়লে ক্রসফায়ারে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ওসি। বিএনপি নেতার উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেছিল, “বিএনপির নেতা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রক্ষার জন্য অহেতুক আমাকে (প্রদীপ) জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন।” (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর- https://bit.ly/2XkQSKJ) অথচ বিএনপির আমলে বিএনপির প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর সুপারিশেই পুলিশে চাকরি পায় সে।
পাঠক, সহজেই বুঝতে পেরেছেন যে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফে কথায় কথায় সাধারণ মানুষকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে চাঁদাবাজী করে টেকনাফের টর্চার সম্রাটে পরিণত হয়েছে।
এবার আমি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কিছু কীর্তি তুলে ধরছি। আপনারা একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন কতটা ভয়ঙ্কর ও নৃশংস এই ওসি প্রদীপ কুমার দাশ-
১. ওসি প্রদীপ হোয়াইক্যং এর আনোয়ার নামের এক ব্যক্তিকে তিন দিন ধরে টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করে। প্রতিকার পেতে তার সুন্দরী স্ত্রী এবং বোন কক্সবাজার আদালতে আসলে খবর পেয়ে তিনি দুই নারীকে তুলে নিয়ে টানা ৫ দিন গণধর্ষণ করিয়ে প্রত্যেককে ইয়াবা দিয়ে চালান দিয়ে দেয়।
২. ওসি প্রদীপ হ্নীলার দুবাই ফেরত এক যুবককে ধরে সকালে এক পা ও এক হাতে গুলি করে বাড়িতে ফোন করিয়ে নগদ ২২ লাখ টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় ক্ষতস্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে,
৩. মুসলিম প্রধান দেশে বিতর্কিত এই ওসি পবিত্র রমজান মাসে ইফতার, সেহেরী, তারাবি পড়তে দেয়নি অনেক নিরপরাধ মুসলিমকে। সভ্যতার ইতিহাসে বর্বরতার নজির সৃষ্টি করে সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নে জড়িত এই ওসি কিছুদিন আগে হ্নীলার জনৈক সুদুরের ছেলে শাহীনকে পবিত্র জুমার নামাজে সালাম ফিরাতে না দিয়ে মসজিদ থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
৪. শাপলাপুরে বৃক্ষ প্রেমিক হিসেবে চ্যানেল আই পুরস্কার পাওয়া হাবিব উল্লাহ স্থানীয় এক পুলিশ ও এনজিও কর্মকর্তার সাথে বিরোধের অপরাধে ওসির লেলিয়ে দেয়া পুলিশ হাবিবকে আটক করে শত্রুদের হাতে তুলে দেন। এরপর তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করায় ওসি।
৫. বিজিবির সোর্স হাসান আলী মাদক ও ওসির বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্ষিপ্ত হন প্রদীপ। ফলে হাসান আলীকে তার ফিশিং জাল মেরামত কালে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে পুলিশ তিন দিন আটকিয়ে রেখে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত বলে প্রচার করেন। যা স্থানীয় বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এর সত্যতা মিলবে। এই ঘটনায় স্বামী হারানো স্ত্রী প্রতিবাদ করায় তার মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানা বসতবাড়ী ভেঙ্গে দেয় পুলিশ।
৬. হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে বহুবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান টেকনাফের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। মাদক বিরোধী অভিযানের কথা বলে ওসি প্রদীপ এই পরিবারের একমাত্র সন্তান জুনাইদকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে তার বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করে প্রায় ৩০/৪০ লাখ টাকা লুটপাট করেন।
৭. হ্নীলা মৌলভী বাজার এলাকার দুবাই প্রবাসী এক ব্যক্তি প্রদীপের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটার্স দেওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে তার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
৮. ঝিমংখালীর একজন ৭০ বছরের অবসর প্রাপ্ত পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্ব পালনরত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে মাদক মামলা আছে বলে ধরে নিয়ে টেকনাফ থানা পুলিশ ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করে একটি মাদক মামলায় চালান দেন,
৯. সিআইপি পদমর্যাদার একজন শিল্পপতিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে তৎকালীন বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে গত ১৬ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
১০. ওসি প্রদীপের ছোট ভাই আকবর শাহ থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ। রহস্যজনক কারণে দুইভাই দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে কর্মরত আছেন। এদিকে বরখাস্ত থাকাকালীন ওসি সদীপের বডিগার্ডকে সাথে নিয়ে নগরীর শপিং মলসহ বিভিন্ন এলাকায় ওসি প্রদীপকে চলাফেরা করে,
১১. কোতোয়ালীর এসআই থাকাকালীন নগরীর পাথরঘাটায় এক হিন্দু বিধবা মহিলার জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নিজের বোনের জমি দখলের অভিযোগটাও বাদ যায়নি।
১২. বেসরকারি তেল শোধনাগার সুপার রিফাইনারি থেকে মিরসরাই যাওয়ার পথে নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল গেইট এলাকায় সাড়ে নয় হাজার লিটার কেরোসিনসহ একটি লরি আটক করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত শেষে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দফরতর।
১৩. ২০১২ সালে আদালতের অনুমতি ছাড়া বন্দরে আসা একটি বিদেশি জাহাজকে তেল সরবরাহে বাধা, বার্জ আটক এবং ১৮ দিন পর বার্জ মালিকসহ ১২ জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার ঘটনায় ফেঁসে যান তৎকালীন পতেঙ্গা থানার ওসি প্রদীপ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ওসি প্রদীপকে পতেঙ্গা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
১৪. ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ওসি প্রদীপের একটি মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করায় এক আইনজীবীকে লালদীঘির পাড় থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়।
১৫. ২০১৩ সালের ২৪ মে পাঁচলাইশ থানার পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে শিবির আখ্যা দিয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে আটকের ঘটনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের তোপের মুখে পড়েন ওসি প্রদীপ। সে সময় ওসি প্রদীপের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা ওসিকে লাঞ্ছিত করে।
১৬. পাঁচলাইশে ওসি থাকাকালীন বাদুরতলা এলাকায় বোরকা পরা এক বয়োবৃদ্ধাকে রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ব্যাপক সমালোচিত হন ওসি প্রদীপ। এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে টনক নড়ে। ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট তাকে পাঁচলাইশ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
পাঠক, আরো অনেক লোমহর্ষক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। এতাসব অপকর্মের অভিযোগ থাকা সত্বেও তাকে এখনও পুলিশ থেকে স্থায়ী বরখাস্ত ও যথাযথ শাস্তি দেয়া হয়নি। গত পরশু তার নির্দেশে মেজর রাশেদ সিনহাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে এসআই লিয়াকত। কারণ টেকনাফ থানায় যত ক্রসফায়ার হয় সব এই ওসির নির্দেশেই হয়।
মেজর রাশেদ সিনহাকে নিয়ে ২০৫ জন সাধারণ মানুষকে ক্রসফায়ার করে হত্যার দায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কি বিচার হবে না? ফাঁসি হবে না? তাকে কি ক্রস ফায়ারে মারা হবে না? না কি এখানেও পার্শবর্তী রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে??
সূত্র-১: https://bit.ly/33g1j6h
সূত্র-২: https://bit.ly/2EJfXZA
সূত্র-৩: https://bit.ly/2EKikeD
সূত্র-৪: https://bit.ly/2BQk7h1
সূত্র-৫: https://bit.ly/2XjE47F
……………………………………………………