কোভিড রোগীদের বেশিরভাগের কেবল স্বল্প ও মাঝারি ধরনের উপসর্গ থাকে আর ১০-১৫ শতাংশ জটিলতা তীব্র হয় এবং ৫ শতাংশ গুরুতর অসুস্থতার দিকে যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার দীর্ঘদিন পরও ক্লান্তি, অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা, নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্ন জটিলতা থেকে যেতে পারে। সেরে ওঠার পর বলবৎ দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতাকে ‘লং কোভিড সিনড্রোম’, ‘লং কোভিড’, ‘পোস্ট কোভিড কন্ডিশন’ প্রভৃতি নামে অভিহিত করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। যা সারতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
সাধারণত, কোভিড রোগীরা ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। বেশিরভাগ মানুষ সুস্থতার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। কিন্তু কিছু রোগীর উপসর্গ বিদায় নিতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যায়। এমনকি যেসব রোগীর হাপসাতালে ভর্তি হওয়া লাগেনি, সেরে ওঠার কিছুদিন পরে তাদেরও আবার শারীরিক জটিলতা হতে পারে।
লং কোভিড কি?
লং কোভিডের সংজ্ঞায়ন ও এর গতিপ্রকৃতি জানতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। সেখানে বলা হয়েছিল, নিশ্চিত কোভিডে আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্তদের তিন মাসের মধ্যে লং কোভিডের উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যা টিকে থাকতে পারে কমপক্ষে দু’মাস।
এই উপসর্গগুলোর মধ্যে করোনা আক্রান্তের সময়ের রোগীর মধ্যে যে উপসর্গ দেখা গিয়েছিল, সেসব উপসর্গের মিল না-ও থাকতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে করোনাভাইরাস থাকলে উপসর্গ অনুযায়ী কিছু চিকিৎসার পরামর্শও দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা।
লং কোভিডের উপসর্গ
লং কোভিডে কিছু নতুন ধরনের জটিলতা হতে পারে, সেগুলো হয়ত কোভিড আক্রান্তের সময়ে ছিল না। আবার কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেগুলো কেবল গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ ধরনের কিছু জটিলতার একটি তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। এর মধ্যে রয়েছে -
> শ্বাসকষ্ট বা শর্টনেস অব ব্রেথ
> শারীরিক দুর্বলতা
> চিন্তা ও মনোনিবেশে অসুবিধা। যেটাকে অনেক সময় ‘ব্রেইন ফগ’ নামে অভিহিত করা হয়।
> কাশি
> বুক বা পাকস্থলিতে ব্যাথা
> মাথা ব্যাথা
> শরীরের গ্রন্থি বা মাংসপেশিতে ব্যাথা
> ডায়েরিয়া
> ঘুমের সমস্যা
> দাঁড়িয়ে থাকতে অবসাদগ্রস্ততা
> র্যাশ
> মনোভাবের পরিবর্তন
> স্বাদ বা গন্ধে পরিবর্তন
যেসব কোভিড রোগী গুরুতর অসুস্থতার বা ইমিউন সিস্টেমে বড় রকমের অসুবিধার মধ্য দিয়ে যায়, তাদের বিভিন্ন অঙ্গের অসুবিধাও দীর্ঘদিন থাকতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গের অসুবিধার মধ্যে হৃদপিন্ড, ফুসফুস, কিডনি, চর্ম প্রভৃতিতে প্রভাব থেকে যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক জটিলতা বেশি না হলেও পরবর্তী সময়ে কিছু শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামাটরি সিন্ড্রোম (এমআইএস) হতে পারে শিশুদের। এক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে মৃদুমাত্রার উপসর্গ। এর মধ্যে রয়েছে -
> প্রচণ্ড জ্বর
> কাঁপুনি
> দম আটকে আসা
> কাশি
> গন্ধ না পাওয়া
> গলা ব্যথা
> অবসাদ
> শরীর ব্যথা।
এছাড়াও মুখের স্বাদ হারানো, ডায়রিয়া, পেটের গোলমাল, বমি এবং ‘মিউকোকিউটেনিয়াস ইফ্লামাটরি সাইন’ দেখা দিতে পারে তাদের।
চিকিৎসায় কী করণীয়
যে ধরনের উপসর্গই দেখা যাক না কেন, করোনার টিকা গ্রহণকে তা ঠেকানোর প্রাথমিক রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচনা করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। গবেষণার মধ্য বলছে, যেসব ব্যক্তি করোনার টিকা নিয়েছেন, তাদের এক মাসের বেশি উপসর্গ থাকার ঘটনা খুবই কম ঘটছে।
যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন ও খনিজযুক্ত খাবার, বেশি করে আমিষ এবং প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে শারীরিক ফিটনেস বাড়ানোর পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলোও করা যেতে পারে। যথেষ্ট ঘুম ও বিশ্রামের চেষ্টা করতেও ভোলা যাবে না।
জটিলতা বেশি হলে রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রক্ত, রক্তচাপ ও বুকের এক্স-রে করে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। এরপর তারা নিশ্চিত হতে পারবেন, জটিলতার পেছনে কোভিড, না ভিন্ন কিছু।
এছাড়া স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩), কোভিড-১৯ টেলিহেলথ (০৯৬৬৬৭৭৭২২২)-সহ চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে পরামর্শ ও স্বাস্থসেবা পাওয়া যাবে।