টিকা নিতে ভয় হচ্ছে? যা করবেন





দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেকে ভয়ডরহীনভাবে আনন্দে টিকা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। তবে বিপরীত মনোভাবেরও থাকতে পারেন কেউ কেউ। কেননা টিকা নিতে যাওয়ার আগেই সিরিঞ্জের ভয়ে থাকেন তাদের অনেকে; আবার কারও মধ্যে সংশয় কাজ করে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে। এসব ভয় আর শঙ্কা কাটানোর বিভিন্ন উপায় চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসা ও মনোবিজ্ঞানীরা।


সুঁই ফোটার ভয় দূর করবেন যেভাবে


কেউই চায় না তার শরীরে সুঁই বিধুক। এটা রক্ত পরীক্ষা, টিকা গ্রহণ কিংবা রক্তদান - যে কোনো ক্ষেত্রে হোক না কেন। যে কেউই চাইবে তার শরীরে সুঁই না ফুটুক। সুঁইয়ের এমন ভীতি মোটামুটি সবার মধ্যে কাজ করে। তবে, কারও কারও ভয়ের মাত্রা অনেক বেশি, যা দূর করা উপায়ও আছে।


সাধারণত শিশুদের মধ্যে সুঁইয়ের ভীতি দেখা দেয়। কারণ ধারালো কিছু বিদ্ধ হোক, এটা বেশ অস্বস্তির ও যন্ত্রণার। বয়স বাড়লে তেমন ভয় কেটে যায় বেশিরভাগের ক্ষেত্রে। কিন্তু অনেকের মধ্যে সেই ভীতি বড় বয়সেও থেকে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অতিমাত্রায় সুঁই ভীতিকে বলা হয় ‘ট্রাইপ্যানোফোবিয়া’ (trypanophobia)। দুইটি গ্রিক শব্দাংশ ‘ট্রাইপানো’ (বিদ্ধ হওয়া) এবং ‘ফোবিয়া’ (ভয়)- এর মিশেলে তৈরি হয়েছে এই শব্দ।






কয়েকটি বিশেষ কারণেও এমন সুঁই ভীতি তৈরি হতে পারে:


> সংশয়ী মনোভাবের অধিকারী হলে


> অতীতে সুঁই নিয়ে বাজে কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে


> সুঁই ফোটার বা ইনজেকশনের বাজে অভিজ্ঞতা শুনলে


> স্বাস্থ্যগত কারণে ফোবিয়ায় ভুগলে


> ব্যাথা নিয়ে সংবেদনশীলতা থাকলে


 


ট্রাইপ্যানোফোবিয়ার লক্ষণ


> অতিমাত্রায় ভয় বা উদ্বেগ


> প্যানিক অ্যাটাক, বমি বমি ভাব বা ঘাম ঝরা


> বুক ধড়ফড় করা


> অজ্ঞান হয়ে যাওয়া


> ইনজেকশন দেওয়ার নির্ধারিত দিনের আগে অনিদ্রা


 


ভয় কাটাতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে


> মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখুন। যেমন: ফ্লোরে থাকা বিশেষ কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। কোভিড-১৯ মহামারীর বন্দী অবস্থা মনে করুন আর টিকা নেওয়ার পর জীবনযাপন সহজ হয়ে যাবে, এমন উচ্চাশা করতে থাকুন।


> টিকা প্রয়োগের ঠিক আগে টিকা প্রয়োগে নিয়োজিত নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রস্তুতিমূলক কাজ দেখবেন না। সুঁইয়ের নড়াচড়া দেখতে দেখতে আপনার ভীতি বাড়তে পারে।


> শান্ত থাকার চেষ্টা করতে পারেন। দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার মতো রিলাক্সেশন কৌশলও আপনাকে শান্ত রাখতে সহায়তা করতে পারে।


> কোভিড টিকা দেওয়া হয় মাংসপেশিতে। এ কারণে নড়াচড়া করে মাংসপেশি হালকা রাখার চেষ্টা করুন, যা আপনার ব্যাথা কমাতে সহায়তা করবে।


> টিকা নেওয়ার সময় কারও সহায়তা নিন। পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের হাত ধরা থাকলে কিংবা গলার স্বর শুনলে ‍আপনার প্রশান্তি অনুভূত হতে পারে।


 


পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয় দূর করতে করণীয়


করোনার টিকা নিয়ে গুজবের ডালপালা গজানোর চেষ্টা করেছে কেউ কেউ। ফলে, টিকা নিয়ে দেখা গিয়েছে নানা রকমের সন্দেহ, সংশয় আর অবিশ্বাস। আবার টিকা-বিরোধীদের নেতিবাচক প্রচারণাও সংশয়ের মাত্রা বাড়িয়েছে। আবার টিকা উৎপাদনকারী দেশ বা কোম্পানি নিয়েও আছে কিছু নেতিবাচক ধারণা, প্রচারণা।


তবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের আলোকে মানুষের জন্য আশ্বাস বাণীই শোনাচ্ছেন। মহামারী থেকে মুক্তি লাভের উপায় যে টিকা গ্রহণের মধ্যে রয়েছে, সে কথাই তুলে ধরছেন তারা। এরপরেও আপনি যদি টিকার কার্যকারিতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সংশয়ী হয়ে থাকেন, তাহলে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।


উৎপাদনের আগে যে কোনো টিকাকেই নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ল্যাবে আবিষ্কারের পর প্রি-ক্লিনিক্যাল ধাপে বিভিন্ন প্রাণীর ওপর এটা প্রয়োগ করে কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন গবেষকরা। এরপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তিন ধাপ পেরোতে হয় যে কোনো টিকাকে। প্রথম ধাপে বাছাই করা ছোট দলের ওপর, দ্বিতীয় ধাপে মূলত যাদের জন্য এই টিকা ব্যবহার হবে তাদের ওপর এবং তৃতীয় ধাপে বড় সংখ্যক মানুষের ওপর প্রয়োগ করে টিকার কার্যকারিতা দেখা হয়।


ট্রায়ালে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ করে দেখা হয় টিকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কার্যকারিতাসহ নানা দিক। এরপর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পরই টিকা উৎপাদন করা হয়। স্বচ্ছ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উৎপাদিত হওয়ার কারণে টিকা নিয়ে ভয় বা সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।


 


কোভিড টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অন্য টিকার মতোই




ট্রায়ালের সময়ই বের হয়ে আসে যে কোনো ওষুধ বা টিকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কার্যকারিতা কেমন হবে। অন্য সব ওষুধ কিংবা টিকার মতো কোভিড টিকারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো খুবই মৃদু হয়ে থাকে। যেমন- টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব, মাংসপেশি  ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, জ্বর, ক্লান্তি ইত্যাদি।


ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে, টিকা নেওয়ার পরে যেকোনো সমস্যা হলে অবশ্যই দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।



Post a Comment

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال