খলিফা আবু বকর রা. এর প্রথম ভাষণ : বিশ্বনেতাদের জন্য আজও কত প্রাসঙ্গিক

 



খলিফা আবু বকর রা. এর প্রথম ভাষণ : বিশ্বনেতাদের জন্য আজও কত প্রাসঙ্গিক

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তিনিই ছিলেন গোটা মুসলিম উম্মাহর নেতা। তাঁর ওফাতের পর দাফন শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। মদিনার আনসাররা সাকিফা বনু সায়িদায় একত্রিত হয়। সেখানে কিছু সংখ্যক মুহাজিরও ছিলেন। আনসাররা অভিমত দিলেন যে, পরবর্তী খলিফা তাঁদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হোক। মুহাজিররা এর প্রতিবাদ জানালেন। দু’পক্ষ থেকে দু’জন খলিফা নির্বাচনের দাবিও কেউ কেউ জানালেন। এভাবে একটি গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।

খবর পেয়ে আবু বকর, উমর ও আরো কয়েকজন মুহাজির সেখানে গেলেন। আবু বকর একটি চমৎকার ভাষণ দিলেন। তাঁর ধীরতা ও যুক্তি-প্রমাণের কাছে সবাই নতি স্বীকার করল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হিসাবে আবু বকরের নাম প্রস্তাব করলেন ও প্রথমেই তাঁর হাতে বাইয়াত নিলেন। এরপর সকলেই বাইয়াত নিলেন। এভাবে ইসলামের প্রথম খলিফা মনোনীত হলেন আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু।

ঐতিহাসিক ভাষণ

খলিফা মনোনীত হওয়ার পর তিনি একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন, যাতে একজন খলিফার দায়িত্ব এবং জনগণের দায়িত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি এই ভাষণটিতে রয়েছে বিশ্বের সমস্ত নেতৃবর্গের জন্য উত্তম শিক্ষা। তিনি বললেন,

"হে লোকসকল, আমাকে তোমাদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। সুতরাং যদি আমি সঠিক কাজ করি তবে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তবে আমাকে সংশোধন করে দিও। সততা একটি পবিত্র আমানত এবং মিথ্যা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা। তোমাদের দুর্বলরা ততক্ষণ পর্যন্ত সবল যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে তার অধিকার আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ এবং তোমাদের শক্তিশালীরা ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্বল যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের কাছে থেকে পাওনা আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ। কোনো জাতি জিহাদ ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন। কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন। আমাকে ততক্ষণ মেনে চলো যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মেনে চলি। যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মেনে না চলি, তাহলে আমার প্রতি তোমাদের আনুগত্যের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না।"

আবু বকর খলিফা হওয়ার আগে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন নবির নেতৃত্ব ও উম্মতের নেতৃত্বের মাঝে পার্থক্য আছে। নবীর প্রদর্শিত পথে একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে নেতৃত্ব দেবে তা দেখিয়ে গেছেন আবু বকর। যেসব মূলনীতি তাঁর ভাষণের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে, তা উম্মাহর নেতাদের জন্য সর্বকালে অনুসরণীয়।

আবু বকর (রা.) স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলেন যে শরিয়তের উৎস কুরআন ও সুন্নাহ। আনুগত্য ততক্ষণ, যতক্ষণ কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্ব ছিল প্রশ্নাতীত, কারণ আল্লাহ নিজে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন ও সংশোধন করেছেন। মুসলিম নেতা জবাবদিহি করবে উম্মাহর কাছে, উম্মাহর দায়িত্ব নেতাকে সঠিক পথে চালানো। সুবিচার ও সমতা হবে ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তি। নেতা ও জনতার মাঝে সম্পর্ক হবে সততা ও বিশ্বস্ততার।

যে জাতি আল্লাহর পথে জিহাদ করবে না, আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, এটাই আল্লাহর নিয়ম বা রীতি। যে জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, সে জাতি হয় দুর্বল।

Post a Comment

কেমন লেগেছে পোস্টি? কমেন্টে জানান
website এ ১০ হাজার ++ বই আপলোড করা আছে,
Download কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আমাকে কমেন্ট জানান, or msashohayeb12@gmail.com
করুন

Previous Next

সার্চ করুন ইচ্ছেমতো

Search results

نموذج الاتصال